Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ওজন কমানোর ওষুধ থেকে পেশি বানানোর জন্য প্রোটিন পাউডার—বাজারে এমন ‘ওয়েলনেস’ প্রডাক্টের ছড়াছড়ি। শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে ডাক্তাররাও ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। যদি ডাক্তার না-ও বলেন, তা-ও অনেকের নিত্যসঙ্গী মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট (ওষুধের দোকানে মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রিও হয়)। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য আলাদা প্রোটিন পাউডার, শিশুদের জন্য ফর্মুলা মিল্ক। শরীর নিয়ে সচেতন হওয়ার দরকার নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু অকারণে মাত্রাতিরিক্ত বেশি ভাববার প্রয়োজন পড়ে না। সমস্যার জন্য সমাধানও হাজির। লাইফস্টাইল ও ওয়েলনেসকে কেন্দ্র করে, বিশ্ববাজারে রমরমিয়ে চলছে ব্যবসা। শুধু যে ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে, তা নয়। মানুষের আয়ুও বাড়ছে। তবে এই ব্যবসা শুধু ওরাল প্রডাক্ট বা লাইফস্টাইলকে সহজ করে তোলার পণ্য বিক্রি করছে না, স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলের ধারণাকেও (পড়ুন ইমেজ ও কনসেপ্ট) বিশ্বের দরবারে করে তুলছে ‘হিট’। যেমন ভাইরাল হচ্ছে বিভিন্ন বেরি দিয়ে সাজানো ওটমিলের বাটি, অ্যাভোকাডো অন টোস্ট। বাদ নেই ‘হেলদি স্কিনকেয়ার’ও। অর্থাৎ, ত্বকের জন্য ভালো ডিটক্স ওয়াটার, দামি সিরাম… ব্লা, ব্লা, ব্লা। এর পিছনে আসল সত্যিটা কী এবং বিষয়গুলো মেকি কি না, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না আম-আদমি।
মোবাইলের স্ক্রিনে আসছে ‘ওয়েলনেস’ কনটেন্ট এবং মানুষ তা গ্রহণও করছে মুড়ি-মুড়কির মতো। ঠিক যেমন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ‘ব্লু জ়োন’ এবং সেঞ্চুরি করা মানুষের ‘ব্লু জ়োন ডায়েট’। যে পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর, সেখানেই বিশ্বের পাঁচ জায়গার মানুষ ১০০ বছর বাঁচে। এমনটা কি সত্যিই সম্ভব? ‘হেলদি লাইফস্টাইল’কে আপনি চ্যালেঞ্জ না করলেও এই শতায়ু জীবনের ‘প্রোমোশন’কেই সম্প্রতি চ্যালেঞ্জ করে বসলেন এক গবেষক: সল নিউম্যান। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সেন্টার ফর লনজেভিটিডিনাল স্টাডিজ়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সল। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ব্লু জ়োন’-এর মানুষের লনজেভিটি বা দীর্ঘায়ু।
আরও পড়ুন:– মধ্যবিত্তের টাকা জমানোর গোপন সূত্র। বিশেষজ্ঞের এই নিয়ম মেনে 1 মাস সংসার চালান, আর ম্যাজিক দেখুন
মানুষ ১০০ বছরেরও বেশি বাঁচতে পারে—এটা অনেক সময় বিশ্বাস করাই কঠিন হয়ে যায়। কোন দেশের মানুষেরা ‘সেঞ্চুরি’ করে, তা গুগল করলেই উঠে আসে একটা নাম: ‘ব্লু জ়োন’। বিশ্বের পাঁচটি জায়গা, যেখানে মানুষ ১০০ বছরেরও বেশি বাঁচে—এমনটাই দাবি করা হয়ে এসেছে প্রায় দু’দশক ধরে। ঠিক যে ভাবে বর্তমান বিশ্বে অর্থাৎ কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে ‘ওয়েলনেস’-এর প্রোমোশন চলছে। ‘ব্লু জ়োন’-এর মানুষের গড় আয়ুই নাকি ১০০ বছর—এই তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্যই গবেষণা চালান সল নিউম্যান।
প্রায় ২০ বছর ধরে ‘ব্লু জ়োন’-এর প্রচার চলছে। বলা চলে যে, গত ২০ বছর ধরে ‘ব্লু জ়োন’ একটা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। যে ব্র্যান্ডের উপর প্রায় ৮টি বই আছে। কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করে নেটফ্লিক্স সিরিজ় বানিয়েছে: ‘Live to 100: Secrets of the Blue Zones’। সেখানে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে ওই পাঁচ জায়গায় ডায়েট ও লাইফস্টাইল নিয়ে। দাবি করা হয়েছে, এমন ‘স্বাস্থ্যকর’ লাইফস্টাইল মানলেই ‘সেঞ্চুরি’ করতে পারবেন আপনিও। কিন্তু এই ‘ব্লু জ়োন’ আদতে কতটা রহস্যে ঢাকা, তা জনসাধারণের চিন্তাভাবনার বাইরে ছিল ২০২৪ পর্যন্ত।
‘ব্লু জ়োন’—এই ধারণার জন্ম ২০০৪ সালে। ইতালির সার্দিনিয়ায় ‘সেঞ্চুরি’ করা মানুষদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ‘এক্সপেরিমেন্টাল জেরেন্টোলজি জার্নাল’-এ। পরবর্তীতে ন্যাশানাল জিওগ্র্যাফির রিপোর্টার ড্যান বার্টনার একটি ফিচার স্টোরি লেখেন, যেখানে জাপানের ওকিনাওয়া, ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা ও ইতালির সার্দিনিয়ার ছবি তুলে ধরা হয়। যেখানে বলা হয়, এই তিন জায়গার মানুষ বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মানুষের তুলনায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে এবং ৭২ বছরের যে গড় আয়ু, তার তুলনায় বাঁচেও বেশি। এই সব জায়গার মানুষেরা:
ধূমপান করেন না,
খুব বেশি খাবার খান না,
মদ্যপান করেনও বুঝে শুনে।
এগুলোই নাকি তাঁদের ১০০ বছর বাঁচার রহস্য। কিন্তু রহস্য লুকিয়ে অন্য জায়গায়।
‘ব্লু জ়োন’-এর মানুষ ১০০ বছর বাঁচে—গোড়ায় গলদ এই তত্ত্বেই। এই পাঁচ জায়গার শুধু ‘সেঞ্চুরি’টাই ‘কমন’ বিষয় নয়, আরও একটি জিনিস রয়েছে। তথ্য নিয়ে হেরফের। আর সেই কারচুপিই সামনে এনেছেন নিউম্যান। তাঁর গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, এই পাঁচ জায়গায় মানুষ যে ১০০ বছর বাঁচতে পারে, তার রেকর্ড শুধু কাগজেই রয়েছে, বাস্তবে নেই। এমনই একটি গবেষণা আলোচনায় আসে ২০১৯ সালেও। কিন্তু পিয়ার-রিভিউ জার্নালে তা প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিশ্ববাসীর কাছে ‘ব্লু জ়োন’-এর অস্তিত্ব ২০১৯-এ শুধু রয়েই গিয়েছে, তা নয়। ‘ইকিগাই’, ‘হাও টু ইকিগাই’-সহ অন্য়ান্য় বই, পডকাস্টের সৌজন্যে এবং সর্বপরি কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে স্বাস্থ্যকর থাকার সংজ্ঞা নির্ধারণে আরও জোরালো হয়েছে। আরও বেশি করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘নীল অঞ্চল’। কিন্তু ২০২৪-এ ছবিটা বদলে গেল হঠাৎ।
মানুষের আয়ু সংক্রান্ত গবেষণায় সল দাবি করলেন, ‘ব্লু জ়োন’-এ থাকা পাঁচটি জায়গায় পেনশন নিয়ে জালিয়াতি রয়েছে, সরকারি দলিলে বয়স নথিভুক্তিকরণের ক্ষেত্রেও কোনও ভুল (নাকি ফাঁক?) আছে। যেমন জন্ম ও মৃত্যুর রেকর্ড (বার্থ অ্যান্ড ডেথ সার্টিফিকেট) সঠিক ভাবে নেই। এই তথ্য আবিষ্কার করেই আইজি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন সল নিউম্যান।
আরও পড়ুন:– ক্যানসারের চিকিৎসায় বাঙালি বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী আবিষ্কার, জানুন বিস্তারিত
‘ব্লু জ়োন’-এ থাকা সব বাসিন্দারই গড় বয়স ১০০ বছর, এমনটা কিন্তু ঠিক নয়। নিউম্যানের গবেষণা বলছে, এই সব জায়গায় মানুষের জন্ম, মৃত্যু এবং সেই সংক্রান্ত নানা বিষয় সম্পর্কে নথিভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে কোনও ভুল আছে। হয়তো ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটা হয়েছে, আবার অসাবধানতার জেরেও হতে পারে। তবে সলের যে দাবি তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে, তা হলো: কয়েক দশক ধরেই এমন ভুল হয়ে আসছে। অর্থাৎ ১০০ বছর আগে যিনি জন্মেছেন, তাঁর বর্তমান বয়সের সাপেক্ষে কোনও প্রামাণ্য নথি (বার্থ সার্টিফিকেট) নেই। আবার যাঁরা ১০০ পার করার আগেই মারা গিয়েছেন, তাঁরা এখনও বেঁচে আছেন সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী। ডেথ সার্টিফিকেট নিয়েও গোলমাল রয়েছে। বেশ কিছু জায়গার সরকারও এই ত্রুটির কথা স্বীকার করে নিয়েছে। সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করলে, ‘ব্লু জ়োন’-এর বহু মানুষের বার্থ সার্টিফিকেট নেই। তাঁরা যে ১০০ বছর আগে জন্মেছিলেন এবং এখন যে তাঁরা ১০০ পার করে গিয়ে বহাল তবিয়তে বেঁচেবর্তে রয়েছেন, এমন তথ্য নথিভুক্ত নেই সরকারি খাতায়-কলমে।
সমস্যাটা শুধু ‘ব্লু জ়োন’কে কেন্দ্র করে নয়। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই আসতে থাকে একের পর এক রিল। প্রচুর কনটেন্ট। তার মধ্যে রয়েছে হেলদি লাইফস্টাইল, পুষ্টিকর ডায়েট, এক্সারসাইজের মতো রিলসও। সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিবেশন করা হয় ব্লুবেরি, অ্যাভোকাডো, ওটস, চিয়া সিডের মতো খাবার। কেউ বানাচ্ছেন ওটমিল, কিনোয়ার স্যালাড। আবার কেউ দামি জিমওয়্যার পরে অনলাইনে যোগা (পড়ুন ইয়োগা) করছেন। জীবনকে কী ভাবে আরও সুন্দর করে তোলা যায়, সেই সব ‘মোটিভেশনাল’ রিলসও হাজির। মোবাইলের স্ক্রিনে উঠে আসা ‘লাইফস্টাইল’ নিজের জীবনে রপ্ত করার চেষ্টাও চলছে। ‘রিয়েল’ ও ‘রিল’-এর মধ্যে রিলকেই রিয়েল করে তুলতে ব্যস্ত বিশ্বের একাংশের মানুষ। যেমন আজকাল অনেকেই (এ ক্ষেত্রে অনেকে বলতে ভারতবাসী এবং বাঙালির কথা বলা হচ্ছে) ব্রেকফাস্টে ওটস খাওয়া শুরু করেছেন। ফল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বেরি, ড্রাগন ফ্রুটস ইত্যাদি বেছে নিচ্ছেন। তা হলে কি বাঙালির মুড়ি-চিঁড়েতে পুষ্টি নেই? নাকি লেবু খেলে দেহে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মিটবে না? আর ঠিক এই ‘সুযোগ’-এই ‘ইকিগাই’-এর মতো বইয়ের ১০৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে, একটা মহল অন্তত এমনটাই মনে করছে। ভাইরাল হয়েছে ‘সুস্থ’ থাকার মন্ত্র।
আরও এক প্রশ্ন উঠে আসছে সলের এই বিশ্লেষণ থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ার পিয়ার প্রেশারের জেরেই কি মানুষ ছুটছেন ডায়েটেশিয়ানর কাছে, জিমে ক্যালোরি ঝরাতে? এই প্রসঙ্গে কলকাতার পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে বলেন, ‘আমরা মানুষের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে ডায়েট সাজেস্ট করি। সবার পক্ষে সম্ভব নয় ওটস, কিনোয়া কিনে খাওয়া। তা ছাড়া এই ধরনের খাবার যে খেতেই হবে এমন কোনও নিয়মও নেই। যে খাবার সহজলভ্য এবং তাতে সঠিক পুষ্টি রয়েছে, সেগুলোই সাজেস্ট করা হয়। তা ছাড়া কোনও পেশেন্ট এসে বলেন না যে, তাঁকে ‘ভাইরাল’ ডায়েটই দিতে হবে।’ এ দিকে, পুষ্টিবিদ জয়িতা ব্রহ্মের অভিজ্ঞতাটা একটু অন্য রকম। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে প্রায়শই এমন মানুষ আসেন, যাঁরা অনুরোধ করেন এমন সব ডায়েট অফার করতে, যেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ডায়েট করলে তাতে কোনও লাভ হয় না। বরং, ক্ষতি হতে পারে।’
সুস্থ থাকতে গেলে দেহে পুষ্টির ঘাটতি রাখা চলবে না। এটা প্রায় সকলেরই জানা, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেলের অভাবে দেহে একাধিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু পুষ্টি কি শুধু ‘দামি’ বা ‘ভাইরাল’ খাবারেই পাওয়া যায়? এই প্রসঙ্গে জয়িতার মতো ডায়েটিশিয়ান মঞ্জিরা সান্যালের সাফ বক্তব্য, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে ডায়েট করাটা বোকামি। প্রথমত, আপনি যেখানে বাস করেন, সেখানকার ফল, সবজিই খাওয়া উচিত। তবেই শরীরে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি পাবেন। অ্যাভোকাডো আমেরিকায় বসে খেলে উপকার বেশি। কিন্তু কলকাতায় এত দাম দিয়ে এই ফল খাওয়ার কোনও মানে হয় না। এর চেয়ে বেশি পুষ্টি আপেল, পেয়ারার মতো ফলে রয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ডায়েট করার মতো কোনও মানে নেই। বরং, যে খাদ্যাভ্যাস আপনাকে সুস্থ রাখবে এবং আপনি সারাজীবন মেনে চলতে পারবেন, সে ভাবেই খাবার খাওয়া উচিত।’ অন্যথায় শরীরে সমস্যা বাড়বে বলেই জানিয়েছেন পুষ্টিবিদেরা।
জাপানের সরকার ২০১০ সালে ঘোষণা করেছিল, ১০০ বছরের বেশি বয়সী ৮২ শতাংশ নাগরিকেরই মৃত্যু হয়েছে (অথচ ‘ইকিগাই’-এর মতো বইয়ের ছত্রে-ছত্রে জাপানের ‘ব্লু জ়োন’-এর কথা)। প্রায় ২,৩০,০০ মানুষ যাঁরা ‘সেঞ্চুরি’ করেছেন, তাঁরা ‘মিসিং’—তাঁদের মৃত্যুর কোনও রেকর্ড নেই, আবার বর্তমানেও তাঁদের অস্তিত্ব নেই। জাপানের আরও একটি হেলথ রিপোর্ট রয়েছে, যা বলছে: ওকিনাওয়াবাসীদের স্বাস্থ্য মোটেই ভালো নয়। তা-ও সেটা ১৯৪৬ সাল থেকে। এমনটাই বলছে খোদ জাপান সরকারের বার্ষিক ন্যাশনাল হেলথ ও নিউট্রিশন সার্ভে। শুধু তা-ই নয়, ২০২০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওকিনাওয়ায় ৪০-৬৫ বছরের ব্যক্তিদের মধ্যে ওবেসিটি ও মৃত্যুর হারও বেশি। অথচ ওকিনাওয়া ‘ব্লু জ়োন’-এর অংশ এবং এখানকার খাদ্যাভ্যাস নাকি স্বাস্থ্যকর। হয়তো প্রাচীন ওকিনাওয়ান ডায়েট স্বাস্থ্যকর। কিন্তু বর্তমান চিত্রটা আলাদা। এটাই তুলে ধরেছে সলের গবেষণা। তাঁর মতে, ওকিনাওয়ায় বহু মানুষের মৃত্যু সরকারি খাতায় নথিভুক্ত করা নেই। অন্যদিকে, গ্রিস ২০১২ সালে ঘোষণা করেছিল সেঞ্চুরি করা প্রায় ৭২ শতাংশ নাগরিক পেনশন নেয় প্রতি মাসে, অথচ ৯,০০০ মানুষ ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে। ২০০৮ সালের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোস্টারিকার প্রায় ৪২ শতাংশ ‘সেঞ্চুরি’ করা মানুষ বয়স নিয়ে মিথ্যা কথা বলেন। তা-ই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না যে, এই ‘ব্লু জ়োন’-এর মানুষের গড় বয়স ১০০ বছর।
সোজেন কাতো নামে এক ব্য়ক্তিকে মনে করা হতো জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘায়ু মানুষ। কিন্তু ২০১০ সালে জানা গিয়েছে, তিনি ১৯৭৮ সালে মারা গিয়েছেন এবং সোজেনের পরিবার প্রায় তিন দশক ধরে তাঁর নামে সরকারের থেকে পেনশেন নিয়ে চলেছে। পরে যদিও সেই পরিবারকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সোজেন কাতোর মতো আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে জাপান-সহ বাকি ‘ব্লু জ়োন’গুলিতে।
এই গবেষণা করার সময় সল ডেমোগ্রাফিক ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন, যেখানে ১৯৭০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবে ২৩৬টি এলাকার মৃত্যুর পরিসংখ্যানও রয়েছে। এখান থেকে সল যে তথ্য় পেয়েছেন, তা বেশ কিছুটা অবিশ্বাসযোগ্য। কেনিয়া, মালাউই ও পশ্চিম সাহারার স্ব-শাসিত অঞ্চলের মতো বেশ কিছু জায়গা থেকে ১০০ বছর বেঁচে থাকার খবর উঠে এসেছে। কিন্তু সেখানকার মানুষের গড় আয়ু যথাক্রমে ৬৪, ৬৫ এবং ৭১ বছর। পশ্চিমের দেশগুলো থেকেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। ব্রিটেনের অন্যান্য জায়গার তুলনায় লন্ডন বরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটে (ব্রিটেনের বঞ্চিত এলাকাগুলোর মধ্যে একটি) মানুষের আয়ু ১০৫ বছরের বেশি। সুতরাং ‘ব্লু জ়োন’-এর মানুষেরাই যে শুধু ১০০ বছরের বেশি বাঁচে, এটাও জোর দিয়ে বলা যায় না।
গত ২০ বছর ধরে যে ‘ব্লু জ়োন’ ব্র্যান্ড বিশ্ব দরবারে ঘুরে বেরাচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে ভুল, দাবি ‘আইজি নোবেল’ জয়ী সল নিউম্যানের। মূলত সরকারি খাতায়-কলমে জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক রেকর্ড না থাকায় ধরে নেওয়া হয় ‘ব্লু জ়োন’-এর প্রায় সকল মানুষই ‘সেঞ্চুরি’ করে। বেশি দিন বাঁচতে চাইলে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনে চলা জরুরি। কিন্তু মানুষ যে ১০০ বছর বাঁচতে পারে অথবা ‘ব্লু জ়োন ডায়েট’ই যে একমাত্র দারুণ ফল দেয়—এ বার এই ধারণা থেকে বেরোনোর সময় এসে গিয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় যা কিছু ‘ভাইরাল’, যা কিছু সুন্দর, সেটাই যে আপনার জন্যও ফলদায়ক, তারও কোনও মানে নেই। বরং, শরীরের জন্য কোনটা উপযুক্ত, সেটার উপরই গুরুত্ব দেওয়া বেশি জরুরি।
আরও পড়ুন:– এখনই কিনবেন না এই সব স্মার্টফোন, দিন কয়েক পরেই কমতে পারে দাম
রেলওয়ে আরআরবি গ্রুপ ডি নিয়োগ 202 5: 32,438টি শূন্যপদ, আবেদন করুনhttps://t.co/rgrAaYMhdT
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 4, 2025
পশ্চিমবঙ্গ চাকরির শূন্যপদ 2025 : সমস্ত WB চাকরির নিয়োগ আপডেট জানুনhttps://t.co/QDNLjfCNhF
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 4, 2025
SBI Clerk নিয়োগ 2025 : বিজ্ঞপ্তি বেরল, এখনই আবেদন করুনhttps://t.co/PIWUVuXIy7
— The Global Press Bangla (@kaushik94544429) January 4, 2025