Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বাস, ট্রেন বন্ধ। হরতালের দিনে উপায় কী? অনেকেই বলে উঠবেন, ‘১১ নম্বরই ভরসা!’ ১১ নম্বর মানে জানেন তো? দু’টি পা সম্বল করে জাস্ট হাঁটা। পুরোনা পাড়ার রকের আড্ডায় এখনও কথাটা চালু।
আড্ডার ঠেকের চলতি কথাবার্তার সুবাদে মুখে মুখে ঘোরা সেই ১১ সংখ্যটিতেই এ বার যেন বৈজ্ঞানিক সিলমোহর পড়ল। এবং সেটাও আবার হাঁটাহাঁটি নিয়েই। কারণ, সাম্প্রতিক একটি অস্ট্রেলীয় গবেষণা বলছে, দৈনিক ১১১ মিনিটের হাঁটা নাকি তুলনায় স্থবির লোকজনের চেয়ে ১১ বছর আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে।
শরীরচর্চার কারণে হাঁটাহাঁটি এখন অনেকের রোজনামচায় সবচেয়ে বড় ‘ইন থিং’। কেউ কেউ নিছক পথচারী হিসেবে হাঁটতে ভালোবাসেন। তাঁদের কথা হচ্ছে না। হচ্ছে তাঁদের কথা, যাঁদের রুটিনে একেবারে মোটা হরফে লেখা থাকে ‘ওয়াকিং’। সকালে বা বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায় রোজ নিয়ম করে হাঁটা এখন বঙ্গজীবনেরও অঙ্গ হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে। ভালো থাকতে হাঁটায় মন মজানোর ক্রেজ় এখন সর্বত্রই নয়া ট্রেন্ড। বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ্বদের মধ্যে।
আরো পড়ুন:– আর নয় ওষুধ, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এবার তাবিজেই হবে গর্ভনিরোধক ! ব্যাপারটা কি, জানুন
ফলে মাঠে, ময়দানে, পার্কে কিংবা সুন্দর রাস্তা আজকাল আর সাতসকালে ফাঁকা থাকে না। ভরে ওঠে স্নিকার্স পরা পথচারীতে। কেউ ওজন ঝরাতে হাঁটেন, কেউ হাঁটেন ফ্যাটি লিভার কিংবা প্রেশার-সুগার-কোলেস্টেরলের মোকাবিলায়। কেউ বা নিছক ঘাম ঝরান নিজেকে তাজা রাখতে। আর জেন-জ়ি? তাদের অনেকেই তো আপাদমস্তক ফিটনেস ফ্রিক। জিমে গেলেও ট্রেডমিলে হাঁটা তাঁদের চাই-ই। তবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষণাটিতে সাফ জানানো হয়েছে, হেঁটে আয়ু বাড়াতে গেলে হাঁটতে হবে একেবারে সময় ধরে, সারা দিনে পাক্কা প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা।
বিখ্যাত বিজ্ঞানপত্রিকা ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিন’-এ কুইন্সল্যান্ডের গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির যে গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তুলে ধরা হয়েছে এমনই তথ্য। গত ১০ বছর ধরে ৩৬ হাজার চল্লিশোর্ধ্ব মার্কিন নাগরিকের উপর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের করা স্টাডিতে দেখা গিয়েছে, গড়ে ১১১ মিনিট রোজ হাঁটলে, হাঁটাহাঁটি না-করা ব্যক্তিদের চেয়ে তাঁদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার সময়সীমা প্রায় ১১ বছর বেড়ে যাচ্ছে। এই হাঁটায় যে কায়িক পরিশ্রম হয়, তাতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে খুবই ভালো মাত্রায়।
গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রফেসর লেনার্ট ভিরম্যান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্টাডির এই ফলাফল দেখে তাঁরা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা দেখেছেন, যাঁরা সুস্থ থেকেও হাঁটাহাঁটি করেন না, আখেরে তাঁদের স্বাস্থ্যহানির বহর ধূমপান কিংবা উচ্চ রক্তচাপের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। উল্টো দিকে, যাঁরা রোজ কমপক্ষে ১১১ মিনিট হাঁটেন বলেই রেকর্ড রয়েছে, তাঁদের কব্জিতে দিনভর থাকা স্মার্ট-ওয়াচে, গড়ে আয়ু দেখা যায় অন্যদের চেয়ে প্রায় ১১ বছর বেশি।
আরো পড়ুন:– 1 লা জানুয়ারি থেকে বদলাবে গুরুত্বপূর্ণ সকল নিয়ম। সতর্ক হন সবার আগে
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, নির্দিষ্টি করে ১১১ মিনিট না তার চেয়ে কম বা বেশি, সেই তর্কে গিয়ে লাভ নেই। তবে রোজ নিয়ম করে দ্রুত হাঁটা যে খুবই ভালো অভ্যাস, তাতে সন্দেহ নেই। শরীর তো বটেই, এতে মনও ভালো থাকে। তাঁর কথায়, ‘টানা জোরে হাঁটলে মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে বিটা-এন্ডরফিন নামে একটি প্রোটিনের ক্ষরণ হয়। এই রাসায়নিকটিকে হ্যাপি হরমোনও বলে। কেন না, এই হরমোন স্ট্রেস কমায়, ব্যথা-বেদনার উপশম করে এবং একটা উৎফুল্ল ও ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে তাজা রাখে শরীর-মন। আর স্ট্রেস কমলে তো আয়ু বাড়তেই পারে। কারণ শরীরে ক্ষয় মন্থর হয়ে যায় তাতে।’
একমত এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞ সুজয় ঘোষও। তিনি জানাচ্ছেন, নিয়মিত জোরে হাঁটাই হলো শরীরের ভালো কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) বৃদ্ধির সবচেয়ে উপযোগী উপায়। তাঁর কথায়, ‘এইচডিএল বৃদ্ধি আখেরে হৃদ-স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। ফলে অকালমৃত্যুর আশঙ্কা তো কমেই।’ তবে এই প্রথম নয়। আমেরিকা, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনের গবেষকরা একযোগে ১২টি স্টাডিতে অংশ নেওয়া প্রায় ১ লক্ষ ১১ হাজার মানুষের হাঁটার নথি বিশ্লেষণ করেও প্রায় একই উপসংহারে উপনীত হয়েছিলেন।
ওই গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, প্রতিদিন যাঁরা অন্তত ২৫০০ স্টেপ ও ২৭০০ স্টেপ হাঁটেন, তাঁদের হৃদরোগে মৃত্যুর আশঙ্কা অন্যদের চেয়ে কমপক্ষে যথাক্রমে ৮% ও ১১% কম হয়ে যায়। আর দৈনিক ৭০০০ স্টেপ ও ৯০০০ স্টেপ হাঁটলে সেই আশঙ্কা যথাক্রমে ৫১% ও ৬০% কমে যায় অন্ততপক্ষে। গবেষণাপত্রটিতে আরও দাবি করা হয়েছে, প্রতি ১০০০ স্টেপ বা ১০ মিনিট করে অতিরিক্ত হাঁটার অর্থ হলো, ক্রমাগত কমে মৃত্যুর ঝুঁকি, বাড়ে আয়ু। ফলে ১১১ মিনিট হাঁটায় যে ১১ বছর আয়ু বাড়বে, তা আর বিচিত্র কী!
আরো পড়ুন:– ATM কার্ড হারিয়ে গিয়েছে? ঘরে বসেই ব্লক করতে পারবেন, কিভাবে ? জেনে নিন