Bangla News Dunia, সারদা দে :- অন্যান্য বছরের মতো ২০২০ সালেও বলিউড আমাদের অনেক সিনেমা উপহার দিয়েছে। তার মধ্যে কিছু বক্স অফিসে ভালোভাবে সারা ফেলেছে কিছু তেমনভাবে দাগ কাটতে পারেনি। দেখে নেওয়া যাক তেমনি কিছু মুভি রিভিউ
- তানহাজি – ২০ সালের ১০ই জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিলো ওম রাউত পরিচালিত তানহাজি। হিন্দি ছাড়াও মারাঠি ভাষাতেও এই ছবিটি দেখানো হয়েছিল। এই ছবিতে শিবাজির সুবেদারতানাজি মালুসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অজয় দেবগণ এবং তার সহধর্মিনী
সাবিত্রীবাঈয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাজল। তবে এই ছবির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ভিলেন উদয়ভান রাঠোড় এর চরিত্রে সাইফ আলী খানের অভিনয়। এছাড়া শিবাজীর চরিত্রে শরদ খেলকার এবং ঔরঙ্গজেব এর চরিত্রে লিউক কেনির অভিনয় দর্শকদের মন কেড়েছে। মারাঠি যোদ্ধাদের বীরগাথা নিয়ে এর আগে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ কিংবা ‘পানিপথ’ এর মতো সিনেমা বলিউড দর্শকদের উপহার দিয়েছে। এই পথেই এগোনোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক ওম রাউত। তবে দর্শকদের মতে এই ছবির সেরা প্রাপ্তি সাইফ আলী খানের অভিনয়। অজয় দেবগনের ‘সিংঘম ‘ অবতার এইখানে অনেকটাই অনুপস্থিত ছিল। অন্যদিকে কাজলেরও তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। শরদ খেলকার এবং লিউক কেনি নিজেদের ভূমিকায় যথাযথ।
- বাঘি থ্রি – আহমেদ খানের পরিচালনায় এবং নাদিয়াদওয়ালা গ্র্যান্ড সনস প্রযোজিত বাঘি ফ্রাঞ্চাইজের তৃতীয় ছবি বাঘি থ্রি ৬ই মার্চ মুক্তি পেয়েছিলো। শ্রদ্ধা কাপুর এবং টাইগার শ্রফ অভিনীত এই ছবিটি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়েছিল। একদিকে থ্রিলার স্টোরি সাথে টাইগারের ভরপুর অ্যাকশন এবং নাচ ছবিটিকে অন্যমাত্রা দিয়েছে।
- আরো পড়ুন :- দাঁতে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে ! মুক্তি পান ঘরোয়া টোটকায়
এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হাত থেকে বড়ো ভাইকে বাঁচাতে ছোট ভাইয়ের লড়াই এই ছবির মূল গল্প। এর আগে বাঘি ছবিতে টাইগারের বিপরীতে দিশা পাটানিকে দেখা গেলেও এই ছবিতে তিনি ক্যামিও চরিত্রে ছিলেন। টাইগার এই ছবিটির মূল সম্পদ। তার ফিজিক , অভিনয় ,অ্যাকশন এবং নাচের দক্ষতা কোনোবারই দর্শকদের নিরাশ করেনি। আহমেদ খানের কোরিওগ্রাফিও ছিল অনবদ্য। টাইগারের ভাইয়ের ভূমিকায় রিতেশ দেশমুখ তার জাত চিনিয়ে দিয়েছেন। শ্রদ্ধা কাপুরের অবশ্য নায়িকার ভূমিকায় বিশেষ কিছু করণীয় ছিলোনা। ছোট্ট ভূমিকায় ছোট পর্দার নায়িকা অঙ্কিতা লোখান্ডেও ছিলেন যথাযথ।
- স্ট্রিট ডান্সার ৩ডি : একধারে পরিচালক এবং কোরিওগ্রাফার রেমো ডি সুজার ছবি স্ট্রিট ডান্সার ৩ডি ২৪ শে জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিলো। এটি ছবিটি ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ABCD 2’ ছবিটির সিক্যুয়েল। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রভু দেবা ,বরুন ধাওয়ান ,শ্রদ্ধা কাপুর ,নোরা ফাতেহি। এছাড়া আরো একঝাঁক নতুন এবং প্রতিভাবান ডান্সাররা এই ছবিতে অভিনয় করেছে। প্রভু দেবার বিখ্যাত নাচ ‘মুকাবিলা’ কে নতুন ভাবে রিমিক্স করে এই ছবিতে আনা হয়েছে।
এই ছবির অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ নোরা। অনেক জনপ্রিয় ডান্স আইটেম নাম্বারে তার নাচ বেশ প্রশংসিত হয়েছে জনপ্রিয় সিঙ্গার বাদশাহও এই ছবিতে গান গেয়েছেন। মূলত ডান্স নির্ভর এই সিক্যুয়েল মুভিটি বক্স অফিস ভালোই সাড়া পেয়েছিলো।
- শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান: ভিন্ন স্বাদের প্রেমের গল্প নিয়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারী মুক্তি পেয়েছিলো শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান। এই ছবিতে সমকামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আয়ুষ্মান খুরানা। চিরাচরিত প্রেমের চোখ থেকে এক্কেবারে সরে এসে আধুনিক যুগের প্রেম দেখিয়েছেন পরিচালক হৃতেশ কেবল্য।
নাকে রিং পরে পুরুষোচিত অবতার ফুটিয়ে তোলার সাহস একমাত্র আয়ুষ্মান ই দেখতে পারেন তবে তার সাথে তার বিপরীতে আমন ত্রিপাঠীর ভূমিকায় জিতেন্দ্র কুমার সমানভাবে অভিনয় করেছেন। কার্তিকের বৈজ্ঞানিক বাবার চরিত্রে গজরাজ রাও এবং মায়ের চরিত্রে নিনা গুপ্ত অনবদ্য। সমকামী চরিত্রের স্টিরিওটাইপিংয়ের গল্প থেকে এ কাহিনি অনেক ধাপ এগিয়ে। অভিনয় এবং গল্প দর্শকদের হাসানোর পাশাপাশি প্রেমকে নতুন ভাবে ভাবতে এবং দেখাতে শেখাবে এই সিনেমা।
- মালাং : ৭ই ফেব্রুয়ারী মুক্তি পেয়েছিলো মোহিত সুরি পরিচালিত থ্রিলার সিনেমা মালাং। মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন আদিত্য রয় কাপুর এবং দিশা পাটানি। ছবির নায়ক বোহেমিয়ান অদ্ভেত এবং সারার প্রেমপর্ব শুরু হয় গোয়ায়। সেখান থেকে তাদের ড্রাগসের জগতে প্রবেশ ,তারপরে সারার প্রেগন্যান্ট হওয়া,অদ্ভেতের এই অবস্থায় সারাকে ফেলে যাওয়া এবং পরে ফিরে আসা হলো মূল গল্প।
ছবিতে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় ছিলেন কুনাল খেমু। তার অতীত নিয়েই সেকেন্ড হাফের মূল গল্প ছিল। ছবিটির অন্যতম আকর্ষণ ছিল একদিকে কন্যাহারা পিত এবং অন্যদিকে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অনিল কাপুরের অভিনয়। ছবিটি বক্স অফিসে তেমনভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি।
- ছপক: মেঘনা গুলজার পরিচালিত ছপক সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিলো ১০ই জানুয়ারি।অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষী আগরওয়ালের জীবনী নিয়ে সিনেমাটি তৈরী হয়েছে। মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন দীপিকা পাডুকোনে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের দমিয়ে রাখার জন্য কিংবা তাদের অবস্থান বোঝানোর জন্য অ্যাসিড আক্রমণ একটি নতুন উপায় হয়ে উঠেছে। কিন্তু আক্রান্ত হয়েও একটি মেয়ে হিসেবে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করা এবং জয়লাভ করা এই ছবির মূল গল্প।
‘রাজি ‘ এর মতো স্পাই ড্রামা কিংবা ‘তলোয়ার’ এর মতো রুদ্ধশ্বাস রহস্য এই ছবিতে দেখান নি মেঘনা। তবে নারীর ইচ্ছেশক্তি এবং তার লড়াই করে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এগিয়ে চলাকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পের মাধ্যমে। দীপিকা অ্যাসিড আক্রান্ত মালতির ভূমিকায় যথাযথ। তবে পদ্মাবত এর মতো সিনেমায় গ্ল্যামারাস অভিনয়ের পরে অ্যাসিড আক্রান্তের ভূমিকায় তাকে হয়তো দর্শকদের মনে ততটা ধরেনি। তাই ছবিটি তেমনভাবে দর্শকদের মনে দাগ কাটতে পারেনি।
- লাভ আজ কাল (২০২০) : নব্বই এর দশক এবং ২০২০ এই দুই দশকের দুই ভিন্নধর্মী প্রেম কাহিনী নিয়ে পরিচালক ইমতিয়াজ আলির সিনেমা ‘লাভ আজ কাল’ .নব্বই দশকের প্রেমিক রঘু এবং এই দশকের প্রেমিক বীরের চরিত্রে কার্তিক আরিয়ানের প্রাণবন্ত অভিনয় দর্শকদের মন কেড়েছে।
তবে তার পাশে অমৃতা -সইফ কন্যা সুন্দরী সারা আলী খান সেইভাবে দাগ কাটতে পারেননি। তার থেকে বরং স্নিগ্ধ লেগেছে আরুষি শর্মার নিষ্পাপ সৌন্দর্য। রণদীপ হুদা স্বল্প পরিসরেও নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমান করেছেন। কিন্তু ‘জব উই মেট’, ‘ককটেল’ কিংবা ‘হাইওয়ে’র মতো হাউসফুল সিনেমার ধরে কাছে যেতে পারেনি এটি। এমনকি,‘লাভ আজ কাল (২০০৯)-এর বেঞ্চমার্কেও পৌঁছয়নি এই সিনেমাটি।
- থাপ্পড়: অনুভব সিনহা পরিচালিত থাপ্পড় সিনেমাটি মুক্তি পায় ২৮শে ফেব্রুয়ারী। কেবলমাত্র একটা থাপ্পড়ের কারণে ডিভোর্সের মামলা ?? সিনেমা দেখার আগে সবার মনে এই প্রশ্নটি এলেও তাপসী পান্নু অভিনীত এই সিনেমা দেখার পরে বোঝা গিয়েছিলো থাপ্পড় আসলে পড়েছিল আমাদের তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে।
স্বইচ্ছায় নামী নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন হেলায় ছেড়ে দিয়ে গৃহবধূ হওয়া অমৃতার জীবনে স্বামীর ভালবাসা, আর্থিক সচ্ছলতা, শাশুড়ির স্নেহ, বাপেরবাড়ির আদর কোনও কিছুরই অভাব ছিল না । কিন্তু রাগের মাথায় ভরা পার্টিতে অমৃতার গালে বিক্রম থাপ্পড় এই সুখের স্মৃতিকে নষ্ট করে দেয়। ভালোবাসার সাথে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাওয়া অমৃতা আজকের দিনের অনেক অত্যাচারিত নিপীড়িত গৃহবধূদের নতুন করে পথ দেখাবে সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই।
- পাঙ্গা : বাস্তব জীবনে পাঙ্গা নিতে অভ্যস্ত বিতর্কিত অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত অভিনীত ‘পাঙ্গা’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিলো ২৪ শে জানুয়ারী। এই ছবিতে কঙ্গনা একজন কাবাডি খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বিয়ের পরে এবং সর্বোপরি মা হওয়ার পরে আবার করে পেশাদারি খেলোয়াড় জীবনে ফেরার গল্প এটি।
সকলের চোখে যখন কেরিয়ার শেষ তখন পেশাদারি মঞ্চেআবার ফিরে আসার যে পাঙ্গা একমাত্র কঙ্গনাই সেটা নিতে পারেন। চিত্রনাট্য অনবদ্য ছবির আদ্যপান্ত জুড়ে কেবলই কবাডি নয়, পাশাপাশি খেলোয়াড়ের পারিবারিক জীবন,প্রতিবন্ধকতাকেও তুলে ধরা হয়েছে নিপুণভাবে। ছবির সংলাপ প্রাসঙ্গিক এবং গল্পের দুই অধ্যায়কে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন :- গলা-বুক জ্বালা কিংবা চোঁয়া ঢেকুরের সমস্যায় ভোগেন ? মুক্তি পান ঘরোয়া উপায়ে