EPFO Rule Change: সম্প্রতি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (EPFO) পিএফ (PF) থেকে টাকা তোলার নিয়মে একাধিক বড়সড় পরিবর্তন এনেছে, যাকে ‘EPFO 3.0’ বলা হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতিতে নিয়মকানুন শিথিল করা হলেও, এখন সেগুলিকে আবার নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এই নতুন নিয়মগুলি আপনার আংশিক প্রত্যাহার (Partial Withdrawal), সম্পূর্ণ সেটেলমেন্ট এবং বিশেষ করে আবাসন সংক্রান্ত প্রত্যাহারের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। কিছু নিয়ম যেমন কর্মীদের সুবিধা দিয়েছে, তেমনই কিছু নিয়ম নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। আসুন বিস্তারিতভাবে এই নতুন পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
প্রত্যাহারের কারণ এখন আরও সহজ (৩টি বিভাগে বিভক্ত)
আগে পিএফ থেকে আংশিক টাকা তোলার জন্য প্রায় ১৩টি বিভিন্ন কারণ দেখাতে হতো, যেমন – বিয়ে, পড়াশোনা, চিকিৎসা, বাড়ির কাজ ইত্যাদি। নতুন নিয়মে এই সব কারণকে প্রধান তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে:
- জরুরী প্রয়োজন: চিকিৎসা, বিয়ে, পড়াশোনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
- আবাসন সংক্রান্ত প্রয়োজন: বাড়ি কেনা, নির্মাণ বা হোম লোনের কিস্তি মেটানো।
- বিশেষ পরিস্থিতি: যেমন বেকারত্ব।
এই পদক্ষেপের ফলে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হবে, কাগজপত্র কম লাগবে এবং দ্রুত অ্যাপ্রুভাল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ন্যূনতম সার্ভিস পিরিয়ড (চাকরির সময়কাল) কমানো হলো
আগে বিভিন্ন কারণে টাকা তোলার জন্য বিভিন্ন মেয়াদের চাকরির অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হতো (যেমন বাড়ি তৈরির জন্য ৫ বছর, বিয়ের জন্য ৭ বছর)। নতুন নিয়মে এই শর্তকে সহজ করে ন্যূনতম সার্ভিস পিরিয়ড বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১২ মাস অর্থাৎ ১ বছর করা হয়েছে। এর ফলে নতুন কর্মীরাও জরুরী প্রয়োজনে সহজে পিএফ থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন: ৭৫% তোলার সীমা (২৫% জমা রাখা বাধ্যতামূলক)
এটি এই পরিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত অংশ। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কর্মীরা এখন তাদের পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা মোট টাকার সর্বোচ্চ ৭৫% পর্যন্ত তুলতে পারবেন। অর্থাৎ, ন্যূনতম ২৫% টাকা অ্যাকাউন্টে জমা রাখতেই হবে।
- উদাহরণ: আপনার পিএফ অ্যাকাউন্টে ৪ লক্ষ টাকা থাকলে, আপনি সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা তুলতে পারবেন। বাকি ১ লক্ষ টাকা আপনার রিটায়ারমেন্টের জন্য জমা থাকবে।
- সরকারের যুক্তি: সরকারের মতে, পিএফ একটি অবসরকালীন সুরক্ষা প্রকল্প। এই নিয়ম নিশ্চিত করবে যে কর্মীরা অবসর গ্রহণের সময় যেন একেবারে শূন্য হাতে না থাকেন।
বেকারত্বের ক্ষেত্রে টাকা তোলার নিয়মে কড়াকড়ি
চাকরি চলে গেলে বা বেকার হয়ে পড়লে পিএফ তোলার নিয়মে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
- পুরানো নিয়ম: কোভিড পরবর্তী সময়ে, বেকারত্বের ২ মাস পরেই পিএফ-এর ১০০% টাকা তুলে নেওয়া যেত।
- নতুন নিয়ম: এখন পুরো টাকা তোলার জন্য ন্যূনতম ১২ মাস বা ১ বছর বেকার থাকতে হবে।
- পেনশনের টাকা: পেনশনের (EPS) টাকা তোলার জন্য ৩৬ মাস (৩ বছর) অপেক্ষা করতে হবে।
এই নিয়ম নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন, কারণ হঠাৎ চাকরি হারালে ১২ মাস অপেক্ষা করা কঠিন হতে পারে।
গৃহক্রেতাদের জন্য সুখবর: আবাসন সংক্রান্ত নিয়মে ছাড়
তবে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য ভালো খবর রয়েছে।
- পুরানো নিয়ম: বাড়ি কেনার জন্য পিএফ তুলতে ৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা লাগত।
- নতুন নিয়ম: জীবনের প্রথম বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে, এখন মাত্র ৩ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই পিএফ থেকে টাকা তোলা যাবে।
- টাকার পরিমাণ: কর্মীরা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা মোট টাকার (কর্মচারী + নিয়োগকর্তার অংশ + সুদ) ৯০% পর্যন্ত তুলতে পারবেন, যা ডাউন পেমেন্ট বা EMI দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যাবে।
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ছোঁয়া: দ্রুত এবং পেপারলেস পরিষেবা
নিয়মকানুন সহজ করার পাশাপাশি পরিষেবা ডিজিটাল করার দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে:
- অটো-সেটেলমেন্ট: ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্লেইম এখন ডিজিটাল ভেরিফিকেশন (আধার, eKYC) -এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্পত্তি হবে।
- দ্রুত প্রসেসিং: আগে যেখানে টাকা পেতে ১০-১৫ দিন লাগত, এখন UPI-ভিত্তিক সিস্টেমের মাধ্যমে তা ৩-৫ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে।
- পেপারলেস: পুরো প্রক্রিয়াটি কাগজবিহীন করা হচ্ছে, সাথে থাকছে ট্র্যাকিং এবং SMS আপডেটের সুবিধা।
উপসংহার
EPFO-এর এই নতুন পরিবর্তনগুলি একদিকে যেমন বাড়ি কেনা বা ডিজিটাল পরিষেবার ক্ষেত্রে কর্মীদের সুবিধা করে দিয়েছে, তেমনই অন্যদিকে ৭৫% তোলার সীমা এবং বেকারত্বের ক্ষেত্রে ১২ মাসের অপেক্ষার নিয়ম সাধারণ কর্মীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সরকারের লক্ষ্য অবসরকালীন সঞ্চয় সুরক্ষিত রাখা, কিন্তু বর্তমান প্রয়োজনের সাথে তার ভারসাম্য রাখাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।