বহরমপুর: আজ শ্যামা মায়ের আরাধনা। আপামর বাঙালি মেতে উঠবে আদ্যাশক্তির উপাসনায়। তবে জঙ্গিপুরের চাচণ্ডে এবারের ছবিটা একটু ভিন্ন। গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে মায়ের মন্দির। তবে অক্ষত রয়েছে বেদি। আর সেই বেদিতেই আদ্যাশক্তির আরাধনা হবে এখানে।
গঙ্গার ভয়াবহ ভাঙনে কেউ ভিটেমাটি হারিয়ে, কেউ আবার ফাঁকা আকাশের নীচে দিন গুজরান করছেন। তবে তাতে মনের জোরে আর মায়ের আরাধনায় ভাটা পড়েনি এতটুকুও। শতাব্দীপ্রাচীন মায়ের মন্দির বিলীন হয়ে গিয়েছে প্রকৃতির রুদ্ররূপে ভাঙনের কবলে পড়ে। তবে অদ্ভুতভাবে দেবীর থান অক্ষত রয়ে গিয়েছে। তাই জৌলুসের বহর এবছর না থাকলেও, আবেগের এতটুকুও কমতি নেই।
শোঁ শোঁ শব্দে ভয়াল গঙ্গা যখন বিকেল ঘনিয়ে আসতেই গর্জন করছে, তার মাঝেই শক্তির দেবীর আরাধনায় যাতে কোনও রকমের ত্রুটি না থাকে, তার কসুর করছেন না মিনতি দাস, বাপন দাস থেকে শুরু করে সনাতন ঘোষরা। শহরে যখন আলোর রোশনাইয়ে সকলে মেতে উঠবেন রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, তখন এখানে পুজো কিছুটা ফিকে। যদিও পুজোয় যে কোনও ত্রুটি থাকবে না তা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন উদ্যোক্তারা। মিনতি বলেন, ‘প্রকৃতির রোষে মায়ের মন্দির বিলীন হয়ে গিয়েছে গঙ্গায়। তবে দেখুন তার পরেও দেবীর থানে পুজো হবে। এর চেয়ে আর কী ভালো হতে পারে। মা আমাদের লড়াইয়ের শক্তি দিচ্ছেন। দেখি চেষ্টা করি লড়াইয়ের।’
এবছর বিঘার পর বিঘা জমি নদীতে হারিয়ে গিয়েছে। ফলে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা নিয়েই কোনওরকমে দিন গুজরান করছেন দুর্গতরা। তার মধ্যে দিয়েই মাকে বরণ করতে প্রস্তুত সকলে। এক লহমায় নদীগর্ভে মন্দির চলে গিয়েছে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে অবিকৃত থাকা কালী মায়ের থানেই এবার পুজো করবেন গ্রামবাসী। চাচণ্ডের বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে ঐতিহ্য আর পরম্পরা অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর মাঝে সন্ধ্যা গড়াতেই প্যান্ডেলের ম্যারাপ বেঁধে ফেলার কাজ শেষ। রাত শেষ হলেই তিথি মেনে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে মায়ের। লাল সিমেন্টের বেদি। আর তারই পাশে একদিকে শামিয়ানা খাটিয়ে মায়ের এমন আরাধনা সত্যিই এই পরিস্থিতিতে এক বিরল চিত্র।
জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন,‘গঙ্গার ভাঙনে বহু মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছেন। তবুও তার মাঝে আলোর উৎসবে মনোবল চাঙ্গা রেখে দেবীর আরাধনায় মেতে উঠছেন তাঁরা। এটা খুবই প্রশংসনীয়। ওই সব দুর্গত মানুষকে সাধ্যমতো সহযোগিতায় আমরা প্রস্তুত।’














