Bangla News Dunia , Rajib : ভারতের বেশিরভাগ মানুষেরই শরীরের গঠন রোগা, কিন্তু পেট মোটা। এর অন্যতম কারণ হল, পেটের উপর অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হওয়া। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ভিসেরাল ফ্যাট বলে। এই ফ্যাট শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আশেপাশে জমা হয়, বিশেষত পেটে। ভিসেরাল ফ্যাট জমার প্রধান কারণ হল অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং জীবনযাত্রার ধরন। ভারতে অধিকাংশ মানুষ অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খান। পাতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি। এগুলি খরচ না হয়ে সহজেই ফ্যাটে পরিণত হয়। সেই সঙ্গে নিয়মিত ফাস্টফুড বা তেলে ভাজা খাবারের কারণেও এই সমস্যা বেড়েই চলেছে।
ভুঁড়ির বিজ্ঞানসম্মত কারণ
১. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ভারতীয়দের ডায়েটের বেশিরভাগটাই কার্বোহাইড্রেট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর। আগেকার দিনের মানুষ অনেক হাঁটাহাঁটি করতেন। বাড়ির সমস্ত কাজ, যেমন ঘর সাফাই, বাটনা করা, কাপড় কাচা নিজে হাতে করতেন। ছোটরা মাঠে খেলাধুলা করত। এক কথায় পুরুষ হন বা মহিলা, সবারই কায়িক পরিশ্রম অনেক বেশি ছিল। তখন অনেক ভাত খেলেও তাই ভুঁড়ি হত না। কিন্তু এখন লাইফস্টাইল অনেক আরামদায়ক হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু ভাতের পরিমাণ সেই আগের মতোই আছে। সেই কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ হচ্ছে। যদি শরীরের ক্যালোরি বার্ন করার ক্ষমতা কম হয়, তবে এই অতিরিক্ত ক্যালোরি ভিসেরাল ফ্যাট হিসেবে পেটে জমা হয়।
আরো পড়ুন:- রোজভ্যালির টাকা দেওয়া শুরু, আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকল? এভাবে সহজে আবেদন করলেই মিলবে টাকা
২. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: ভারতে বেশিরভাগ মানুষই সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের দিকে ঝুঁকছেন। অর্থাৎ শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাচ্ছে। অফিসের কাজ কিংবা ঘরে বসে থাকার কারণে ক্যালোরি বার্ন হওয়ার সুযোগ কমে। ফলে পেটে চর্বি জমা হয়।
৩. জেনেটিক প্রভাব: ভারতীয়দের মধ্যে অনেকের জেনেটিকভাবে ফ্যাট পেটে জমার প্রবণতা থাকে। বিশেষত, শরীরের অন্যান্য অংশে না জমে ফ্যাট পেটে জমা হতে শুরু করে।
৪. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ বা হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে পেটে চর্বি জমা হতে পারে। পুরুষদের মধ্যেও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে টেস্টোস্টেরন হরমোনের স্তর কমে যাওয়ার ফলে ফ্যাট বাড়তে থাকে।
ভুঁড়ি কমানোর উপায়
১. সুষম খাদ্যাভ্যাস: পেটের ফ্যাট কমানোর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি ও অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, শাকসবজি এবং সম্পূর্ণ শস্য জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে, যা হজম ব্যবস্থাকে ভালো রাখে এবং পেট ভরাট রাখে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম যেমন দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার ইত্যাদি ফ্যাট বার্ন করতে খুবই কার্যকরী। সেই সঙ্গে পেটের ব্যায়াম যেমন ক্রাঞ্চেস, প্ল্যাঙ্ক, লেগ রেইজ করার ফলে পেটের পেশি শক্তিশালী হয়। পেট বাইরের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসে না। প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। সময় না পেলে, অন্তত সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যায়াম করুন। ছুটির দিন ১-২ ঘণ্টা ব্যায়াম করে নিন।
আরো পড়ুন:- ‘প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ হবে’, দেশবাসীর উদ্দেশে বিবৃতি আওয়ামি লিগের
৩. পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের মেটাবলিজম কমে যায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পেটের চর্বি বাড়তে থাকে। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৪. স্ট্রেস কমানো: স্ট্রেসের কারণে কর্টিসল হরমোনের স্তর বেড়ে যায়, যা শরীরে চর্বি জমার একটি প্রধান কারণ। তাই স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে।
৫. পর্যাপ্ত জল পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করা শরীরের টক্সিন বের করে দেয় এবং মেটাবলিজম বাড়িয়ে তোলে, যা ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে হলেও, একবার অভ্যাসে পরিণত হলে তা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরী হয়।
#End