‘ব্রেন রটিং’: যার জেরে মস্তিষ্কের কাজ বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এর কারণ কি মাল্টিটাস্কিং নাকি মোনোটাস্কিং? জেনে নিন

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:-  অবসর কাটানো আর সময় কাটানোর ফারাক মুছে দিয়েছে সোশ্য়াল মিডিয়া। ‘বুড়ো আঙুল দেখানো’র সংজ্ঞা বদলে দেওয়া সমাজ মাধ্য়মের ‘লাইক’ (লাভ, রিঅ্য়াক্ট)-ই যেন এখন সময় কাটানোর অন্য়তম অবলম্বন। স্মার্টফোনের স্ক্রিনে উপচে পড়ে একের পর এক মিম, ভিডিয়ো, পোস্ট। কিছু-কিছু তথ্য হয়তো আপনার আগ্রহের বিষয়বস্তু। আবার কিছু জিনিস কোনওদিনই কাজে আসবে না। অথচ ‘ইনফাইনাইট স্ক্রোল’-এর সৌজন্য়ে ফুটে উঠছে স্ক্রিনে, যা আপনি দেখে চলেছেন… দেখেই চলেছেন। এতে কি আপনার মস্তিষ্ক, বিশেষত কগনিটিভ স্বাস্থ্যের (মস্তিষ্কের যে অংশ আমাদের চিন্তাভাবনা করতে, নতুন বিষয় শিখতে এবং মনে রাখার ক্ষেত্রে কাজ করে) কোনও ক্ষতি হয়?

প্রসঙ্গত, অক্সফোর্ড ‘ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার ২০২৪’ হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘ব্রেন রট’কে। কিন্তু এই শব্দ নতুন নয়। ১৮৫৪ সালে, হেনরি ডেভিড থোরোর লেখা বই, ‘ওয়ালডেন’-এ প্রথম ‘ব্রেন রট’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রেন রট বা মস্তিষ্কের পচনের মানেটা এ রকম: কোনও তুচ্ছ উপাদান (এক্ষেত্রে অনলাইন কনটেন্ট) অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে কোনও ব্যক্তির মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থার অবনতি। সোশ্য়াল মিডিয়া আর স্মার্টফোনের সৌজন্য়ে তৈরি-হওয়া ‘টুমাচনেস’ (too muchness)-এর পৃথিবীতে এখন প্রশ্ন: অত্যধিক পরিমাণে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে কি সত্য়িই মস্তিষ্কে পচন ধরতে পারে?

আরো পড়ুন:- মাশরুমের উপকারিতা জুরি মেলা ভার ! কি জানালেন পুষ্টিবিদ?

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস দাস বলেন, ‘যদি মনোসংযোগের সঙ্গে আগ্রহের বিষয়বস্তু দেখেন, তা হলে সেটা মস্তিষ্কে স্মৃতি (মেমোরি) হিসেবে স্থায়ী জায়গা পায়। পাশাপাশি যে সব ভিডিয়ো বা পোস্টে রঙের খেলা থাকে, সেগুলো মস্তিষ্কের পিছন দিকে গিয়ে স্টিমুলেট করে। এ ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় জানা দরকার, এক একজনের আগ্রহের বিষয়বস্তু যেহেতু আলাদা আলাদা, তাই মস্তিষ্কও ওই আগ্রহের উপর নির্ভর করে কাজ করে। তা-ই স্ক্রিনে আসা সব ভিডিয়ো-ছবিই যে মস্তিষ্কে থাকবে, এমনটা মোটেই নয়।’ আগ্রহের বিষয়বস্তু যা-ই হোক না কেন, মানুষের মধ্যে প্রতিনিয়ত বাড়ছে স্ক্রোলিং আর ডুম স্ক্রোলিংয়ের প্রবণতা। মোবাইল হাতে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারে বছর তিনেকের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধও। কিন্তু এই আসক্তি যে মোটেই ভালো নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনে থাবা বসিয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার শৈশব-কৈশোর নষ্ট করছে। একাধিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যও। কম বয়সে হাতে ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট বাচ্চাদের মেন্টাল, ইমোশনাল ও ফিজ়িক্যাল হেলথকে নষ্ট করছে। আর এই অ্যাডিকশন বা আসক্তি অনেকের জীবনে ‘কাল’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই কারণেই অস্ট্রেলিয়া কিশোর-কিশোরীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ‘ব্যানিং’-এর পথে এগোচ্ছে। ১৬ বছর বয়স না হলে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় পা রাখতে পারবেন না সে দেশের নাগরিকরা। চলতি বছরের নভেম্বরেই এই বিল পাশ করেছে আলবার্তো আলবানিজের সরকার।

আরো পড়ুন:- নতুন শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিকের 19টি বিষয়ে পাঠক্রম বদল, কোন কোন বিষয়? জেনে রাখুন

শুধু যে নতুন প্রজন্মের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রবণতা বেশি, এমনটা নয়। বরং, মিলেনিয়াল ও জেন জ়ি-ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছে। ExpressVPN-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৪৬% জেন জ়ি স্ক্রিন টাইম কমানোর চেষ্টা করছে। তারা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ থাকছে। অন্যদিকে, ২৯% মিলেনিয়াল মানসিক চাপ কমানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমাচ্ছে। কম বয়সিরা জীবনে বিশেষ ভাবে খাটাচ্ছে ‘ডিজিটাল মিনিম্য়ালিজ়ম’-এর পন্থা। ক্যাল নিউপোর্টের লেখা ‘Digital Minimalism: Choosing a Focused Life in a Noisy World’ বইয়ে ‘ডিজিটাল মিনিম্য়ালিজ়ম’ শব্দের উদ্ভব। এটা এমন একটা স্ট্রাটেজি, যা মানুষকে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রাত্য়হিক জীবনে তার প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ বা সংযত করতে সাহায্য় করে। অত্যধিক পরিমাণে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে যদি মস্তিষ্কে পচন ধরেও, সেখানে নিজেকে বাঁচানোর প্রথম ধাপ হতে পারে ডিজিটাল মিনিম্য়ালিজ়ম।

সোশ্যাল মিডিয়া খুললে একের পর এক কনটেন্টের যে বন্য়া, তার সব আদৌ গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে। যদিও রিলসের দুনিয়ায় অনেকেই ‘লেস ইজ় মোর’ তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। ডিজিটাল মার্কেটিং বা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই এই বিষয়টির উপর জোর দেন। ভালো মানের কনটেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে ইউজ়ারকে ব্যস্ত রাখাই হলো ‘লেস ইজ় মোর’-এর মূল উদ্দেশ্য। যদিও এই কনটেন্ট অবশ্যই প্রাসঙ্গিক হওয়া চাই। মানুষ যাতে তার সঙ্গে ‘রিলেট’ করতে পারে। এভাবে কম স্ক্রোলিংয়ের মাধ্যমে অনেক কিছু জেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্ক্রোলিং কম হোক বা বেশি, তা মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে বাধ্য।

একসঙ্গে একাধিক কনটেন্ট গ্রহণের ফলে কী প্রভাব পড়ছে মস্তিষ্কে? উত্তরে ডাঃ পান বলেন, ‘আমাদের মস্তিষ্ক মাল্টিটাস্কিং, অর্থাৎ একসঙ্গে একাধিক কাজ করার জন্য তৈরি নয়। যখনই আমরা একই সময়ে একসঙ্গে একের বেশি কাজ করব, কোনও কাজটাই ঠিক করে করা হবে না।’ সহজ ভাষায় বলতে গেলে শুধু একাধিক অনলাইন কনটেন্ট গ্রহণের ফলেই যে মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে, তা নয়। আপনি যদি খেতে বসে টিভি দেখেন, কিংবা গান শুনতে শুনতে কোনও কাজ করেন, অর্থাৎ এই ধরনের একই সময়ে করা দুই বা ততোধিক কাজ করলে আমাদের মস্তিষ্ক কোনওটাই ঠিকভাবে মনে রাখতে পারে না। এমনকী কাজ করার ক্ষেত্রে মনোসংযোগও নষ্ট হয়। অর্থাৎ, মুখে যতই আপনি-আমি ‘মাল্টিটাস্কিং’-এর কথা বলি, মানব মস্তিষ্ক মূলত ‘মোনোটাস্কিং’-এর জন্যই তৈরি (১৯৫৯-এ পিটার ড্রাকার যে ‘নলেজ ওয়ার্ক’ শব্দটি প্রথম ব্য়বহার করেন, সেই ‘নলেজ ওয়ার্ক’-এর ক্ষেত্রে পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মাল্টিটাস্কিং)।

 

যখন আপনি একসঙ্গে একাধিক কাজ করেন, কোনও কাজটাই মনের মতো ফল দেয় না। প্রথমত, মনোসংযোগ নষ্ট হয়। কোনও কাজটাই ঠিক মতো হয় না। ‘মোনোটাস্কিং’-এ এই সব ঝামেলা নেই। এতে যেমন প্রোডাক্টিভিটি (এক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বলতে মূলত পারদর্শিতার কথা বলা হচ্ছে) বাড়ে, তেমনই কাজের গুণগত মানও ভালো হয়। অর্থাৎ, আপনি যদি বই ও গান একসঙ্গে শোনেন, তা হলে কোনওটাই ঠিকমতো হয় না। যদি শুধু গান শোনেন, কিংবা শুধু বই পড়েন, সেটা অনেক বেশি ভালো। গানের লিরিক্স বা বইয়ের ছাপা অক্ষর বেশি মনে থাকে। অথচ সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোলিংয়ের মাধ্যমে আমরা ক্রমাগত ‘মাল্টিটাস্কিং’ই করে চলেছি। তার সঙ্গে যদি আরও অন্যান্য কাজ করেন, বিপদ আরও বেশি। দরকার ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোলিংটা ‘অ্যাডিকশন’ বা নেশার মতো বলে জানাচ্ছেন আশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘হয়তো কোনও দরকার নেই, তাও ১০-২০ মিনিট অন্তর অন্তর ফোন ঘাঁটছেন। হয়তো অবচেতন মনেই ফোন ঘাঁটছেন। এটা কিছুটা নেশার মতো। অর্থাৎ, যখন ফোন হাতে নিচ্ছেন না বা সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোল করছেন না, তখন শরীরে একটা অস্বস্তি কাজ করতে থাকে। এগুলো আগামী দিনে গিয়ে মনোসংযোগ কমিয়ে দেয়। কোনও কাজ মন দিয়ে করতে পারেন না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বাড়ছে।’

সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোলিংয়ের নেশা মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলছে। কমছে মেমোরি ধরে রাখার ক্ষমতাও। দেবাঞ্জনবাবু বলেন, ‘মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা সীমিত। চার থেকে সাতটির বেশি কাজ মস্তিষ্ক মনে রাখতে পারে না—এই কাজটা করে ব্রেনের ওয়ার্কিং মেমোরি। যখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা একাধিক কনটেন্ট দেখি, মস্তিষ্ক আদতে কোনওটাই মনে রাখে না। তা ছাড়া আমরা কোনও কনটেন্টের গভীরে পৌঁছাতে পারি না, ব্যাপ্তি অজানা থাকে। উপর-উপর তথ্যগুলো জানতে পারি। এই বিষয়গুলোই আজকাল নতুন প্রজন্মের মধ্যে ‘FOMO’ (Fear of missing out)-র সমস্যা তৈরি করছে। পাশাপাশি ডোপামিন হরমোনের সিক্রিয়েশন কমছে। এটাও অবসাদ, উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ। এগুলো মূলত স্বল্পমেয়াদি প্রভাব। কিন্তু সত্য এটাই যে, ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কে পচন ধরতে পারে।’

প্রসঙ্গত, ‘ব্রেন রট’ শব্দটিকে জেন জ়ি এবং জেন আলফারাও গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট, ক্যাসপার গ্র্যাথওহল। অথচ এই প্রজন্মই সবচেয়ে বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট তৈরি করে এবং আবার কনজ়িউমও করে। তা হলে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব কী? এ প্রসঙ্গে দেবাঞ্জনবাবু বলেন, ‘এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই আগামী দিনে স্মৃতিভ্রংশের মতো রোগের সৃষ্টি করে। যদিও এ বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে।’

একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে কোনওটাই মস্তিষ্কে স্থায়ী হয় না। বরং, ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জেরে ডিপ্রেশন, অ্যানজ়াইটি বাড়ে। শুধু তা-ই নয়, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সমস্যা হতে পারে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় যে সঠিক তথ্য বা ভালো কনটেন্টই আসে, এমন নয়। অনেকে নেগেটিভ কনটেন্ট গ্রহণ করেই সময় কাটায়। একে ইন্টারনেটের পরিভাষায় বলে ‘ডুমস্ক্রোলিং’। এক্ষেত্রে মানুষ শুধু নেগেটিভ কনটেন্ট গ্রহণ করেই সময় নষ্ট করে, তা নয়। তাঁরা সবসময় আপ-টু-ডেট থাকতে চায়। কোথায় কখন কী হলো—সেগুলো জানতে ঘন ঘন ফোন চেক করে। ডুমস্ক্রোলিংয়ের জেরে শুধু যে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি তৈরি হয়, তা নয়। ব্যক্তির মধ্যেও নেগেটিভ ফিলিংস তৈরি হতে থাকে। কোনও রকম বিরতি ছাড়াই ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোল করা কিংবা ওয়েব সার্চ করা, ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডারেরই অংশ।

আরো পড়ুন:- সুখবর! ১৯,৯০০ টাকা বেতন, মাধ্যমিক পাশে ভারতীয় পোস্ট অফিসে প্রচুর কর্মী নিয়োগ! শীঘ্রই এভাবে আবেদন করুন

নিজেকে কেন আটকানো যায় না স্ক্রোলিং থেকে? সচেতন হয়েই কি সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির সহ-অধ্যাপক পায়েল মজুমদার বলেন, ‘আমরা যখন স্ক্রিন স্ক্রল করতে থাকি, তখন একটা লুপের মধ্যে পড়ে যাই। একটার পর একটা ভিডিয়ো, ছবি, লেখা আসে, আমরা শুধু দেখতে থাকি। কিন্তু সেগুলো কিছুই মাথায় স্থায়ী হয় না। এর পিছনে কাজ করে ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’ (fight or flight response)।’ ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’কে ব্যাখ্যা করে পায়েল বলেন, ‘যখন কোনও সমস্যা তৈরি হচ্ছে বা কোনও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি, সেখান থেকে নিজেকে বের করার জন্য বা পরিস্থিতিকে উন্নত করার জন্য আমরা কিছু না কিছু পদক্ষেপ করি। আরও সহজ ভাষায় বলতে, কোনও সমস্যার সঙ্গে লড়াই করার সময় আমাদের যে সাইকোলজিক্যাল রিয়্যাকশন হয়, সেটাকেই ‘ফাইট’ বলা হয়। আর যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে কোনও সমস্যার মুখোমুখি হতেই থাকেন কিংবা মানসিক চাপে থাকেন, বিষয়টা যদি ‘গা সওয়া’ হয়ে যায়, তখন আপনি আর সেটা থেকে বেরোনোর জন্য কোনও কাজ করেন না বা পদক্ষেপ করেন না। উল্টে যাতে সেই সমস্যা বা মানসিক চাপ আপনাকে বিচলিত না করে, বিরক্ত না করে, তার জন্য নিজেকে অন্য কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত করে নেন কিংবা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু আদতে সমস্যার সমাধান হয় না। এটাকে ‘ফ্লাইট’ বলা হচ্ছে। এই ক্রমাগত স্ক্রিন স্ক্রোলিংয়ের ক্ষেত্রে এই ‘ফাইট’ কাজ করছে।’

‘ফ্লাইট’ বোঝাতে গিয়ে পায়েল আরও বলেন, ‘প্রতি বয়সের মানুষের জীবনে এই ‘ফাইট’ কাজ করে। যেমন স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে পরীক্ষার টেনশন, অফিসে কাজের চাপ, পারিবারিক অশান্তি, শারীরিক অসুস্থতা—এমন নানাবিধ সমস্যা রয়েছে রোজকারের জীবনে। এগুলো নিয়ে বেশি মাথা না ঘামাতে চাওয়াটাই ‘ফ্লাইট’। আর এই ‘ফ্লাইট’ হিসেবে আমরা নিজেকে যুক্ত করে ফেলছি সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোলিংয়ের সঙ্গে, কারণ ফোনটা খুব সহজ অপশন, হাতের কাছেই রয়েছে। আমরা যখন স্ক্রিন স্ক্রোল করছি, তখন আমাদের দৈনন্দিন চাপগুলোর কথা মনে পড়ছে না। আবার স্ক্রিনে যা কিছু একের পর একে দেখে যাচ্ছি, সেটাও মস্তিষ্কে থাকছে না। দেখতে গেলে এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। না সমস্যা থেকে বেরোনো যাচ্ছে, না স্ক্রিনে দেখা কনটেন্ট মাথায় থাকছে।’

অবচেতন মনে স্ক্রিন স্ক্রোল করুন কিংবা এআই জেনারেটেড আগ্রহের বিষয় পর পর দেখতে থাকুন, সব ধরনের কনটেন্ট মাথায় থাকে না সব সময়। কিছু ক্ষেত্রে সে সব কনটেন্ট স্মৃতিশক্তি হিসেবে থেকে যায় এবং ভবিষ্যতে কাজে আসে। আবার কিছু ভিডিয়োর কথা ভুলে যান। কিন্তু এই ক্রমাগত স্ক্রোলিংয়ের জেরে ধীরে ধীরে ‘মস্তিষ্কে পচন’ ধরছে, তা এড়ানোর উপায় নেই।

মন্তব্য করুন