অজয় দাস :- এখানে আমরা শলভাসন ও ধনুরাসনের নিয়ম ও উপকারিতা জানবো। ধনুরাসন এর উপকারিতা
শলভাসন এর উপকারিতা
এই আসনে শরীরের আকৃতি অনেকটা সলভ অথাৎ পঙ্গপাল জাতীয় পতঙ্গের আকার ধারণ করে বলে এই আসনের নাম শলভাসন।
নিয়ম :- এই আসনে প্রথমে উপুড় হয়ে শবাসনে শুয়ে পড়ুন। এবার হাতের তালু দুটি শরীরের দু পাশে মাটির সঙ্গে ঠেকিয়ে ঊরু দুটির নিচে রাখুন। এবার দু পা জোড়া করে হাতের তালুতে চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলুন। দেখবেন এই সময় যেন পা জোড়া থাকে এবং হাঁটুর কাছে ভেঙে বা বেঁকে না যায় এবং চিবুক মাটির সাথে ঠেকে থাকে।
এবার নিঃশাস স্বাভাবিক রাখুন ও ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড সময় দিয়ে আসনটি তিন বা চারবার করুন এবং প্রত্যেকবার করার পর একবার করে শবাসন করবেন। অত্যাধিক মেদ হবার জন্য যারা দু পা একসঙ্গে তুলতে পারবেন না তারা এক পা তুলে ব্যায়ামটি করবার অভ্যাস করুন।
কার্যকারিতা ও উপকারিতা :- বর্তমানে অনেকেই কোমরের কোনো না কোনো ব্যাথায় কষ্ট পান। এই আসন রোজ অভ্যাসে পিঠের মাংস পেশিকে এবং পাছার মাংস পেশিকে মজবুত করে পিঠের সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। এই আসনটিতে পেটের অভ্যান্তরিন যন্ত্র সমূহে অত্যাধিক চাপ পড়ার ফলে হৃৎপিণ্ডের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়াম হয়। সুতরাং যারা হৃৎপিণ্ড জনিত কোনো সমস্যায় ভুগছেন তারা শলভাসন করবেন না।
মেয়েরা ঋতুকালীন কোমরের ব্যাথার জন্য নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে শীঘ্রই সুফল লাভ করবেন।
ধনুরাসন এর উপকারিতা
এই আসনটিতে শরীর ধনুকের আকার নেয় তাই এই আসনটির নাম ধনুরাসন।
নিয়ম :- প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাঁটুর কাছ থেকে পা দুটি ভাঁজ করে পাছার উপরে আনুন। দু হাত পিছনের দিকে নিয়ে দু পায়ের গোড়ালির কাছে পায়ের গোছ দু হাতে ধরুন।
এই অবস্থায় দু পায়ের ঊরু মাটির সাথে ঠেকে থাকবে। এবার ঘাড় পিছনের দিকে বাঁকিয়ে বুক ও হাটু মাটি থেকে যতদূর সম্ভব উপরের দিকে তুলুন। লক্ষ রাখবেন যাতে হাত দুটি কুনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে না যায় এবং হাটু জোড়া থাকে। কেবল মাত্র তলপেটের উপর ভর করে শরীর সহজেই মাটি থেকে উঠে যাবে।
এবার নিঃশাস স্বাভাবিক রাখুন। প্রত্যেকবার ২০থেকে ৩০ সেকেন্ড সময় করে আসনটি তিন থেকে চারবার করুন এবং প্রত্যেকবার করার পর একবার করে শবাসন অবশ্যই করবেন।
কার্যকারিতা ও উপকারিতা :- এই আসন করার সময় পিঠের মাংস পেশি গুলিতে চাপ বেশি পরে এবং মেরুদন্ড স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা ছোট হয়ে যায়। সেই জন্য মেরুদন্ড স্থিত স্নায়ু কোন্দ্র গুলিতে বেশি পরিমান রক্ত চলাচল হয়ে তাদের সুস্থ ও সবল রাখে। এই আসনের নিয়মিত অভ্যাস মেরুদণ্ডকে নমনীয় , সুস্থ ও শক্তিশালী এবং মেরুদন্ড স্থিত একত্রিশ জোড়া স্নায়ুকে সতেজ রাখে।
ধনুরাসনটি নিয়মিত অভ্যাসে পিটার সমস্ত অভ্যান্তরিন যন্ত্রাদিতে অধিক পরিমানে রক্ত চালাচাল হয়। তাই লিভার ,প্লীহা ,কিডনি ও অন্ত্রগুলির কাজ ভালো ভাবে হয়। রোজ এই আসনটি অভ্যাস করলে কোষ্ঠ কাঠিন্য ও ডিসপেপসিয়া কমে যায় এবং দুর্বল লিভারে সুস্থ করে তোলে।
যারা গলগন্ড রোগে ভুগছেন তারা ভুল করেও এই আসনটি করবেন না এছাড়া লাম্বার স্পন্ড লোসিসে যারা ভুগছেন তারা এবং যে কোনো কোমরের ব্যাথার প্রাথমিক অবস্থায় এই আসনটি না করাই ভালো। কারণ এই আসন করার সময় সমস্ত শরীরের ওজন কটিদেশের কশেরুকার উপর পড়ার ফলে ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে।
এছাড়া ঘাড়ের কোনো ব্যাথা থাকলে এই আসন করবেন না। সেই ব্যাথা নতুন হোক বা পুরানো। তবে পুরানো ব্যাথা হলে অবশই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং ভালো করে চিকিৎসা করুন , নয়তো এই সাধারণ একটি ব্যাথা অনেক বড়ো আকার ধরণ করতে পারে। তাই আগে থেকেই সাবধান হয়ে যান।