Bangla News Dunia, Pallab : অবশেষে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য নিয়োগের দরজা খুলল! রাজ্যে আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চলা অনিশ্চয়তা ও আইনি জট অবশেষে কাটল।কলকাতা হাই কোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ের ফলে প্রায় ১৭০০ শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের পথ প্রশস্ত হলো। চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলে আশাবাদী।
দীর্ঘদিনের জটিলতা: কোথা থেকে শুরু?
১৯৯৮ সালে শেষবারের মতো পশ্চিমবঙ্গে আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগ হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর কোনো নিয়োগ হয়নি।
আরও পড়ুন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে গুরুর মর্যাদা দিলেন এই দেশের প্রধানমন্ত্রী, একনজরে দেখে নিন
২০১৯ সালে রাজ্য সরকার ৩৪৫৮টি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও তা নিয়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক।
বিতর্কের মূল কারণ ছিল কেন্দ্রের ২০১৫ সালের নির্দেশিকা। এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল যে, মোট শূন্যপদের ৫০% পদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।
কিন্তু রাজ্য সরকার মাত্র ৪২২টি পদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের (Anganwadi Worker Recruitment 2025) জন্য সংরক্ষিত রেখে বাকি ৩০৩৬টি পদে সরাসরি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বহু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী আদালতের শরণাপন্ন হন।
রাজ্য বনাম কেন্দ্র: নির্দেশিকা ঘিরে সংঘাত
২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার একটি নতুন নিয়ম জারি করে। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল যে, আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫০% শূন্যপদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্য থেকে পূরণ করতে হবে।
কিন্তু রাজ্য সরকার এই নিয়ম পরিবর্তন করে ৭৫% পদে সরাসরি নিয়োগের ব্যবস্থা করে। এই সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক বলে দাবি করেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা।
তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে নিজের মতো নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে চাইছে।
আইনি লড়াই: একের পর এক রায়ে মোড় ঘোরে
২০১৯ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায় দেন যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ৫০% পদ বরাদ্দ রাখতে হবে।
কিন্তু রাজ্য সরকার এই রায় মানেনি এবং সরাসরি নিয়োগ চালিয়ে যায়। ফলে ২০২৪ সালে মামলাটি বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার বেঞ্চে ওঠে।
মামলাকারীদের আইনজীবীরা আদালতে তুলে ধরেন যে, কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে ৫০% শূন্যপদে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুযোগ দিতে হবে।
বিচারপতি মান্থা তাঁর রায়ে জানান, বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগের রায় বহাল থাকবে এবং তা অমান্য করা বেআইনি।
আদালত নির্দেশ দেয় যে, ৩৪৫৮টি শূন্যপদের মধ্যে ১৭২৯টি পদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্য থেকে পূরণ করতেই হবে।
আরও পড়ুন : টাটার হাত ধরে ভারতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে মোদী সরকার, বিশ্বের ১ নম্বর দেশ হবে এবার ভারত
নতুন আশার আলো: দ্রুত নিয়োগের সম্ভাবনা
এই রায়ের ফলে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। চাকরিপ্রার্থীরা আশাবাদী যে, রাজ্য সরকার দ্রুত এই নির্দেশ কার্যকর করবে এবং নিয়োগের জট কাটিয়ে ১৭০০ শূন্যপদে নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার কত দ্রুত হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করে এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অধিকার রক্ষা করে। দীর্ঘ ২৬ বছর পর চাকরিপ্রার্থীরা এখন বাস্তবিক নিয়োগের আশায় দিন গুনছেন।