Bangla News Dunia, দীনেশ :- মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ’৭১-এর গণহত্যার স্মৃতি এখনও বাংলাদেশের অগণিত মানুষের মনে দগদগে ক্ষত হয়ে রয়েছে। পাকিস্তানের কাছে ৪ লক্ষ বাঙালিকে খুন ও হাজার হাজার মহিলাকে ধর্ষণের জন্য একাধিকবার ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছিল আওয়ামি লিগ সরকার। পাকিস্তান ইস্যুতে বরাবর কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ৫ অগাস্টের পালাবদলের পর আমূল বদলে গিয়েছে বাংলাদেশের বিদেশনীতি। প্রধান উপদেষ্টার পদে বসেই পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি মিশরের কায়রোতে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস। সেখানে ’৭১-এর গণহত্যার জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো দূরস্ত, গোটা বিষয়টিকে দৃশ্যত লঘু করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ইউনূস।
আরো পড়ুন :- ‘বাংলাদেশের চিঠি পেয়েছি’, জানুন হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে কী বলল কেন্দ্র ?
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যার কথা উল্লেখ না করে তিনি জানান, পাকিস্তান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলির সমাধান প্রয়োজন। বৈঠকে শাহবাজকে ইউনূস বলেছেন, ‘কিছু বিষয় বারবার সামনে চলে আসছে। এগুলি সমাধানের রাস্তা বের করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’ তবে কী সেই সমাধান সূত্র, সে ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার প্রসঙ্গ এড়িয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করতে ইউনূসকে পরামর্শ দিয়েছেন শাহবাজ। তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যিই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে উন্মুখ।’
আরো পড়ুন :- পাকিস্তান থেকে জাহাজ ভর্তি পণ্য পৌঁছাল বাংলাদেশে, জানুন কী কী আমদানি করা হল ?
কূটনৈতিক মহলের মতে, ইউনূস সরকার যে বাংলাদেশকে ১৯৭১-এর আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে মরিয়া, ঘটনাপ্রবাহ থেকে সেটা স্পষ্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমানের আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করতে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যগুলিকে নিশানা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে হাসিনা পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য ইউনূস প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন বাংলাদেশের মানবাধিকার গবেষক শাহনাজ খান। ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের গণহত্যা কি তাঁর কাছে একটি তুচ্ছ ব্যাপার? পাকিস্তান ক্ষমা না চাইলে ঢাকার সুসম্পর্ক স্থাপনের কথা ভাবাও উচিত নয়।’ ব্রিটেনবাসী বঙ্গবন্ধু অনুরাগী সুশান্ত দাসগুপ্তর বক্তব্য, ‘ইউনূস বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি পাকিস্তানপন্থী এবং তিনি বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে চান।’ ঢাকায় মহম্মদ আলি জিন্নার জন্মদিন পালন, পাকিস্তানের সঙ্গে নৌ ও বিমান যোগাযোগ পুনঃস্থাপন, বাণিজ্যিক লেনদেন ও কৌশলগত সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। দিনকয়েক আগে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার অপরাধে আওয়ামি লিগের দুই কর্মীকে খুন হতে হয়েছে। জেলবন্দি হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ।
আরো পড়ুন :- ‘আমি যতদিন সভাপতি ছিলাম, পার্টি হু হু করে বেড়েছে’ কাকে ইঙ্গিত করে এমন বললেন দিলীপ ঘোষ ?
তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ৭৯ বছর বয়সি মুক্তিযোদ্ধা তথা কৃষক লিগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল হাই ওরফে কানুকে জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানো। ঘটনায় অভিযোগের তির জামাত নেতা-কর্মীদের দিকে। সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে বিরাট মানববন্ধন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’ বলে স্লোগান দেন তাঁরা।