Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী : রথযাত্রার কথা বিশ্বকবি তার কবিতায় লিখেছেন, সেই রথযাত্রার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। কল্পকাহিনী আর পুরাণের মিশেল, আছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর আচার-প্রথার বর্ণনা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রথ শব্দের অর্থ কিন্তু ভিন্ন। গুরুত্ব এবং শ্রদ্ধার দিক থেকেও বেশ উপরে। তাদের কাছে রথ একটি কাঠের তৈরি যান, যাতে চড়ে স্বয়ং ভগবান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। পবিত্র উৎসবটি প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট সময়ে উদযাপিত হয়ে থাকে। রথের নানা কাহিনি প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের নাম। জগন্নাথ এবং বিষ্ণু ও বাসুদেব শ্রী কৃষ্ণেরই দুই রূপ। বলরাম বা বলভদ্র, শ্রী কৃষ্ণ বা জগন্নাথ এবং সুভদ্রাদেবী এই তিনজন একে অপরের ভাইবোন। পুরাণে এমনটা বর্ণিত যে, তাদের তিন ভাইবোনের ঘনিষ্ঠ এবং স্নেহপরায়ণ সম্পর্কের জন্যই তাঁরা পূজনীয়।
তখন সত্যযুগ, মালব দেশের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন শ্রী হরি তথা বিষ্ণু ভক্ত। তিনি গড়ে তুলেছিলেন জগন্নাথধাম তথা শ্রীক্ষেত্র নামের পবিত্র মন্দির। মন্দিরে ছিল না কোনও বিগ্রহ। সন্যাসীর আগমন ঘটে রাজপ্রাসাদে। শ্রী কৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তাঁর মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। রাজা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সেই স্থানে গিয়ে দেখতে পেলেন এক খন্ড কাঠের টুকরা শ্রী হরির সপ্নাদেশে খবর পাঠানো হল শবর রাজ বিশ্ববসুকে। তিনি আসার পর বিদ্যাপতি , রাজা ও বিশ্ববসু এই তিনজনে মিলে সেই কাঠের টুকরো নিয়ে যান রাজার প্রাসাদে রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন।
তিনি রাজার কাছে মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন এবং জানিয়ে দেন, নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। দরজার আড়ালে কাষ্ঠমূর্তি নির্মাণ শুরু হয়। রাজা-রানীসহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন ভেতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ শুনতে। কিছুদিন বাদে রাজা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রানী কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন তারা দেখেন মূর্তি অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা।
বিমর্ষ হয়ে পরেন রাজা। কিন্তু ভক্তের কষ্ট ভগবান সইবেন কেন। রাত্রেই রাজাকে আবার স্বপ্নে দেখা দিলেন। তাকে বললেন তিনি এই রুপেই পূজিত হবেন। তার নিজস্ব কোনও আকার বা আকৃ্তি নেই । ভক্তেরা যে রূপ কল্পনা করে তার আরাধনা করেন তিনি তার কাছে ঠিক তেমনই। তিনি রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন কে বললেন এই অসম্পূর্ণ অবস্থায়ই তিনি পূজো গ্রহণ করবেন এবং পুরুষোত্তম ধামে স্থাপণ করা হয় যেন এবং সেখানেই তিনি পুজো গ্রহন করবেন।
উপনিষদের এই বর্ণনার প্রতীক রূপই হল পুরীর জগন্নাথদেব। তার পুরো বিগ্রহ তৈরি করা সম্ভব হয়নি, কারণ তার রূপ তৈরিতে মানুষ অক্ষম। জগন্নাথ মন্দিরে প্রান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। এভাবেই জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব ঘটে।
আরও খবর পেতে ফলো করুন আমাদের চ্যানেল