Mutual Fund SWP: মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কিন্তু অনেকেই জানেন না যে এখান থেকে নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থাও করা যায়। মিউচুয়াল ফান্ডে সিস্টেমেটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান বা SWP হল এমন একটি কৌশলগত পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আপনি আপনার পুরো পোর্টফোলিও বিক্রি না করেই বিনিয়োগ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তুলে নিতে পারেন। সহজ কথায় বলতে গেলে, এটি সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা SIP-এর ঠিক বিপরীত। যেখানে SIP-তে আপনি নিয়মিত টাকা জমা করেন, সেখানে SWP-তে আপনি মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তুলে নিতে পারেন। যারা তাদের জমানো টাকা বিনিয়োগ করে রেখেও একটি ধারাবাহিক আয়ের উৎস বা ক্যাশ ফ্লো চান, তাদের জন্য SWP একটি আদর্শ বিকল্প।
SWP বা সিস্টেমেটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান কীভাবে কাজ করে?
একটি SWP সেট করা খুবই সহজ এবং সোজাসাপ্টা প্রক্রিয়া। প্রথমে আপনাকে আপনার মালিকানাধীন একটি মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নিতে হবে। এরপর কত টাকা তুলতে চান এবং কত দিন অন্তর টাকাটি আপনার অ্যাকাউন্টে আসবে (ফ্রিকোয়েন্সি), তা নির্ধারণ করতে হবে। একবার এই প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেলে, মিউচুয়াল ফান্ড কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ইউনিট বিক্রি করে সেই অর্থ সরাসরি আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়।
এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, অবশিষ্ট ইউনিটগুলো বিনিয়োগ করা থাকে, ফলে আপনি যখন টাকা তুলছেন তখনও আপনার পোর্টফোলিও বাড়তে থাকে। SWP-এর পিছনে একটি মূল নীতি কাজ করে, যা হলো FIFO (ফার্স্ট ইন, ফার্স্ট আউট)। অর্থাৎ, আপনি যখন টাকা তুলবেন, তখন সবার আগে কেনা ইউনিটগুলোই প্রথমে বিক্রি করা হবে। এই বিষয়টি ট্যাক্স বা করের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ প্রতিটি ইউনিট কতদিন ধরে রাখা হয়েছে তার ওপর করের হার নির্ভর করে।
SIP এবং SWP-এর মূল পার্থক্য
অনেকের মনেই SIP এবং SWP নিয়ে বিভ্রান্তি থাকে। SIP বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান হল মিউচুয়াল ফান্ডে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার একটি কৌশল। এটি বিনিয়োগকারীদের এককালীন মোটা টাকা বিনিয়োগের বদলে সময়ের সাথে সাথে অল্প অল্প করে সম্পদ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, SWP হল সেই জমানো সম্পদ থেকে নিয়মিত টাকা তোলার প্রক্রিয়া, যা অবসরের পর বা নিয়মিত খরচের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
ইক্যুইটি এবং ডেট ফান্ডের ক্ষেত্রে ট্যাক্সের নিয়ম
SWP করার আগে করের নিয়মাবলী জানা অত্যন্ত জরুরি। ইক্যুইটি এবং ডেট ফান্ডের ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা হয়।
| ফান্ডের ধরন | সময়কাল (হোল্ডিং পিরিয়ড) | করের হার |
|---|---|---|
| ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড | ১২ মাসের বেশি | ১.২৫ লক্ষ টাকার বেশি লাভের ওপর ১২.৫% (লং-টার্ম) |
| ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড | ১ বছরের কম | ২০% (শর্ট-টার্ম) |
| ডেট ফান্ড | যেকোনো সময়কাল | বিনিয়োগকারীর ইনকাম স্ল্যাব অনুযায়ী (কোনো ইনডেক্সেশন সুবিধা নেই) |
যেহেতু FIFO পদ্ধতিতে পুরনো ইউনিট আগে বিক্রি হয়, তাই যারা দীর্ঘদিনের বিনিয়োগকারী, তাদের ক্ষেত্রে তোলা টাকা সাধারণত লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনের আওতায় পড়ে। এর ফলে ইক্যুইটি বিনিয়োগকারীদের জন্য SWP ট্যাক্সের দিক থেকে সাশ্রয়ী হতে পারে। অন্যদিকে, ডেট ফান্ডের ক্ষেত্রে সমস্ত লাভ বিনিয়োগকারীর আয়ের সাথে যোগ হয় এবং স্ল্যাব অনুযায়ী ট্যাক্স দিতে হয়, যা ইক্যুইটির তুলনায় করের বোঝা বাড়াতে পারে।
স্থায়িত্ব এবং নমনীয়তা
মনে রাখা প্রয়োজন, SWP চালু করা মানেই যে আপনার বিনিয়োগ চিরকাল চলবে, তা নয়। ফান্ডের রিটার্নের তুলনায় আপনি কত টাকা তুলছেন, তার ওপর এর স্থায়িত্ব নির্ভর করে। যদি ফান্ডের উপার্জনের চেয়ে বেশি টাকা আপনি নিয়মিত তুলতে থাকেন, তবে সময়ের সাথে সাথে আপনার জমানো মূলধন বা কর্পাস কমে যাবে। তবে পরিমিত পরিমাণে টাকা তুললে এটি বছরের পর বছর ধরে আপনাকে স্থির আয় দিতে পারে।
SWP-এর অন্যতম বড় সুবিধা হলো এর নমনীয়তা বা ফ্লেক্সিবিলিটি। আপনি যেকোনো সময় টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারেন, প্ল্যানটি সাময়িকভাবে বন্ধ করতে পারেন অথবা প্রয়োজনে অবশিষ্ট সমস্ত ইউনিট বিক্রি করে টাকা তুলে নিতে পারেন। একমাত্র ELSS-এর মতো ফান্ডের ক্ষেত্রে ৩ বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকে, বাকি ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো বাধা থাকে না।
দাবিত্যাগ: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং এটি কোনো আর্থিক পরামর্শ নয়। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বাজারগত ঝুঁকির আওতাধীন। বিনিয়োগ করার আগে বা SWP চালু করার আগে অবশ্যই আপনার আর্থিক উপদেষ্টার সাথে পরামর্শ করুন এবং স্কিম সম্পর্কিত নথি ভালো করে পড়ে নিন।














