উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: শান্তির নোবেল (Nobel Peace Prize) নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) স্বপ্নভঙ্গ। গণতন্ত্র রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার জুটেছে ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদোর (María Corina Machado)। নোবেল কে পাবেন তার ইঙ্গিত না মিললেও ট্রাম্প যে পাচ্ছেন না তেমন ইঙ্গিত মোটামুটি স্পষ্টই ছিল। কারণ নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প যে মাসে হোয়াইট হাউসের ‘ওভাল অফিসে’ ঢোকেন সেই জানুয়ারির ৩১ তারিখেই নোবেলের মনোনয়ন পর্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ট্রাম্পের নাম মনোনীতদের তালিকাতেই ছিল না। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় তাঁকে নোবেল দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্তত ১০ বার তিনি নিজেকে এই পুরস্কারের যোগ্য হিসেবে তুলে ধরেছেন।
ট্রাম্পের এহেন আচরণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। কেন নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে এতটা মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? অনেকে মনে করছেন তার আগে ৪ জন মার্কিন রাষ্ট্রপতি এই পুরস্কার পান। ১৯০৬ সালে থিওডোর রুজভেল্ট, ১৯১৯ সালে উডরো উইলসন, ২০০২ সালে জিমি কার্টার ও ২০০৯ সালে বারাক ওবামা নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতেন। তবে জিমি কার্টার ছাড়া সকলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে থেকেই এই পুরস্কার পান। এর মধ্যে ওবামা ক্ষমতাসীন হওয়ার মাত্র ৮ মাসের মধ্যে নোবেল শান্তি পুরষ্কার পান। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের জন্য ওবামার ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয় নোবেল কমিটি। যদিও ওবামার নির্বাচন নিয়ে সেই সময় অনেক সমালোচনা হয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন মাত্র ৮ মাসে ওবামা শান্তির স্বপক্ষে এমন কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি যাতে তিনি নোবেল পেতে পারেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো সংবাদপত্র লিখেছিল ‘নোবেল পুরস্কারের মান আরও উন্নত হওয়া উচিত।’
ট্রাম্প নিজেও ওবামার পুরস্কার প্রাপ্তির সমালোচনা করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি কিছুই না করার জন্য’ এটা পেয়েছিলেন। ওবামা একটি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি নিজেও জানতেন না, কিসের জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি শুধু নির্বাচিত হয়েছিলেন, আর তারা ওবামাকে ‘কিছুই না করার জন্য’ পুরস্কারটি দিয়ে দেয়। তিনি দেশ ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছুই করেননি।’ ওবামাও ক্ষমতায় আসার মাত্র ৮ মাসের মধ্যে এই পুরস্কার পান, ট্রাম্পও বর্তমানে ক্ষমতায় ৮ মাস পূর্ণ করেছেন। ফলে বিগত ৪ প্রেসিডেন্টের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। বিভিন্ন মঞ্চে নিজেকে যোগ্য বলে দাবি করতে শুরু করেন। যা বেনজির ঘটনা বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কোনও নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকই নিজেকে ‘যোগ্য’ বলে কখনও তুলে ধরেননি। তাছাড়া ট্রাম্পের যুদ্ধ বন্ধের দাবির স্বপক্ষে সেভাবে জোরালো সমর্থনও ছিলনা। ক্ষমতায় আসার আগে থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করলেও সেই চেষ্টা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি। হামাস-ইজরায়েল শান্তি চুক্তিও কার্যকর হয়নি। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামানোর দাবি একাধিকবার করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু ভারত সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ট্রাম্প দাবি করলেও তার পেছনে জোরাল যুক্তি ছিল না। তবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় শান্তি ফেরাতে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারলে ২০২৬ সালে নোবেলের শান্তি পুরস্কারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম বিবেচিত হতেই পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।