Primary Recruitment: 2022 সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বাকি থাকা শূন্যপদ নিয়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে 11,765 নিয়োগের পড়ে থাকা শূন্যপদে 20-22, আনঅবজর্বড (Unabsorbed), এবং 5% এডিশনাল প্যানেলের প্রার্থীদের একসঙ্গেই নিয়োগ করতে হবে। এই মামলাটি আজ কোর্ট নম্বর ১১-তে এক নম্বর মামলা হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল।
মামলার মূল ভিত্তি ও যুক্তি
এই মামলার প্রধান যুক্তি ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট এবং মেধা-ভিত্তিক। আবেদনকারীদের মূল বক্তব্য ছিল, পড়ে থাকা শূন্যপদগুলিতে মেরিটের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে, কোনো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে নয়। এই বিষয়ে মামলাকারীরা সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিলেন, এবং সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য লিবার্টি দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট তার ৪ঠা এপ্রিলের অর্ডারে নির্দেশ দিয়েছিল যে পড়ে থাকা শূন্যপদগুলিতে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু সেই অর্ডারে কোথাও বলা হয়নি যে এই শূন্যপদগুলি শুধুমাত্র 20-22 ব্যাচের প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
আশঙ্কার সূত্রপাত হয় যখন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ হাইকোর্টে হলফনামা না দিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে একটি এমএ (MA) আবেদন করে। সেই আবেদনে শুধুমাত্র 20-22 ব্যাচের প্রার্থীদের কথা উল্লেখ করে শূন্যপদগুলির রিক্ল্যাসিফিকেশন চাওয়া হয়। এতেই মামলাকারীদের মনে সন্দেহ জাগে যে, পর্ষদ হয়তো শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ব্যাচের প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলাকারীদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য শূন্যপদ ইয়ারমার্ক করে দেয়নি, তাই মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ হওয়া উচিত।
পর্ষদের হলফনামা এবং আদালতের নির্দেশ
শুনানির সময় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আদালতে একটি হলফনামা জমা দিয়েছে। সেই হলফনামায় তারা জানিয়েছে যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধার সঙ্গে কোনো রকম আপস করা হবে না। আইনজীবী আলী হাসান আলমগীর পর্ষদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ অতীতে 14 টেট এবং 17-এর নিয়োগে মেধা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল।
আদালত আজ পর্ষদের এই হলফনামা নথিভুক্ত করেছে এবং তার ভিত্তিতে একটি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। অর্ডারে বলা হয়েছে:
- পড়ে থাকা শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি শ্রেণীর প্রার্থীদের বিবেচনা করা যাবে না।
- সুপ্রিম কোর্ট এমন কোনো নির্দেশ না দেওয়ায় সকল যোগ্য প্রার্থীকেই কনসিডার করতে হবে।
- যদি মেরিটের ভিত্তিতে মামলাকারীরা এগিয়ে থাকেন, তবে তাদেরও সুযোগ দিতে হবে।
যেহেতু পর্ষদ ইতিমধ্যে একটি প্যানেল প্রকাশ করে নিয়োগপত্র দিয়েছে এবং সেই প্যানেলে হস্তক্ষেপ করতে চায় না, তাই বাকি শূন্যপদ পূরণের জন্য স্বাভাবিকভাবেই কাটঅফ নম্বর কমাতে হবে। এর ফলে, সামান্য নম্বরের জন্য প্যানেল থেকে বাদ পড়া অনেক যোগ্য প্রার্থীও চাকরি পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আইনজীবী আলী হাসান আলমগীর জানিয়েছেন যে, তারা পর্ষদের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রাখবেন। যদি পর্ষদ আবার কোনো অস্বচ্ছতার আশ্রয় নেয় বা সমস্ত শূন্যপদ পূরণ না করে (যেমনটা 3929টি পদের ক্ষেত্রে হয়েছিল), তবে তারা পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
ইতিমধ্যে অন্য একটি গ্রুপ এই বিষয়ে একটি কনটেম্পট (Contempt) মামলা দায়ের করেছে, যা নিয়োগ প্যানেল প্রকাশের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সকলের মূল উদ্দেশ্য একটাই – প্যানেলটি যেন দ্রুত, স্বচ্ছভাবে এবং মেধার ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়, যাতে ভবিষ্যতে নতুন করে কোনো মামলার প্রয়োজন না হয়।














