Primary Recruitment Case: কলকাতা হাইকোর্টে আজ প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ২০২৩-২৫ ডি.এল.এড ব্যাচের পরীক্ষার্থীরা এবং ২০২৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের এজলাসে (কোর্ট নম্বর ১৪) এই মামলার শুনানি চলে, যেখানে মামলাকারী এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ—উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ধরে উত্তপ্ত বাদানুবাদ চলে। মূলত, এই ব্যাচের প্রায় ৪৬০ জন চাকরিপ্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না, যা তাঁদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
মামলাকারীদের আইনজীবীর জোরালো সওয়াল
মামলাকারীদের পক্ষে বিশিষ্ট আইনজীবী আলী হোসেন আলমগীর এবং সাবির আহমেদ আদালতের সামনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও যুক্তিপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। তাঁদের প্রধান বক্তব্যগুলি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- সমতার অধিকার: ২০২০-২২ ডি.এল.এড ব্যাচকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যেভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, ঠিক একই পরিস্থিতি ২০২৩-২৫ ব্যাচের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই আইনের চোখে সমতার ভিত্তিতে তাঁদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত বলে আইনজীবীরা দাবি করেন।
- ফলাফল প্রকাশে অযৌক্তিক বিলম্ব: মামলাকারীদের দাবি, জুন মাসে তাঁদের রিলিজ করা হলেও এখনো পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। পর্ষদ বা কাউন্সিল ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল আটকে রেখেছে বলে গুরুতর অভিযোগ করা হয়। তাঁদের মতে, এই বিলম্বের কারণেই তাঁরা আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারছেন না।
- স্পেশাল এডুকেশন প্রসঙ্গ: স্পেশাল এডুকেশন মামলার উদাহরণ টেনে আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, সেখানে ‘পারসুইং’ (Pursuing) বা পাঠরত প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হলে, সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কেন তা হবে না?
পর্ষদের কঠোর অবস্থান ও পাল্টা যুক্তি
অন্যদিকে, পর্ষদের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী রাতুল বিশ্বাস এবং সুবীর স্যানাল। পর্ষদের অবস্থান ছিল অত্যন্ত কঠোর এবং তাঁরা একাধিক আইনি পয়েন্ট তুলে ধরেন:
- এনসিটিই (NCTE) গাইডলাইন: এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ চাইলে কোর্স সম্পন্ন করার জন্য তিন বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে। কোর্স শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রেজাল্ট প্রকাশ করার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই বলে পর্ষদ দাবি করে।
- ‘পারসুইং’ প্রার্থীদের অযোগ্যতা: পর্ষদের মতে, যারা এখনো পাঠরত বা ‘পারসুইং’ অবস্থায় আছেন, তাঁরা কোনোভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার যোগ্য নন। এই স্বপক্ষে সুপ্রিম কোর্ট এবং বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক অর্ডারের প্রসঙ্গ আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়।
- বি.এড বনাম ডি.এল.এড: পর্ষদ দেবেশ শর্মা মামলার রায় উল্লেখ করে বি.এড প্রার্থীদের টেট পাসের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাঁদের যুক্তি, প্রাথমিকে বি.এড গ্রাহ্য নয়, তাই বি.এড চলাকালীন যারা টেট পাশ করেছেন, তাঁদের শংসাপত্র নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
বি.এড ও টেট সার্টিফিকেট নিয়ে বিতর্ক
মামলায় একটি অত্যন্ত কৌতূহলুদ্দীপক বিষয় উঠে আসে টেট সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়ে। পর্ষদের আইনজীবী যুক্তি দেন যে প্রাথমিকে বি.এড গ্রাহ্য নয়। এর প্রত্যুত্তরে মামলাকারী পক্ষ জানায়, বি.এড অযোগ্য হলেও বর্তমানে তাঁদের মক্কেলদের ডি.এল.এড কোর্স সম্পন্ন হয়েছে এবং তাঁদের কাছে বৈধ টেট সার্টিফিকেট রয়েছে। সুতরাং, তাঁদের আটকানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
শুনানি চলাকালীন ‘ক্যান অ্যাপ্লিকেশন’ গ্রহণ করা নিয়ে একটি বিতর্কের সৃষ্টি হয়, যার বিরোধিতা করেন মামলাকারী পক্ষ। সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি বিভাস পট্টনায়ক একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন রাখেন। তিনি জানতে চান, মেডিকেলের ক্ষেত্রে যদি ‘পারসুইং’ প্রার্থীরা সুযোগ পেতে পারেন, তবে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন তা সম্ভব নয়?
আজকের মতো শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় শেষ হয়েছে। আগামীকাল অর্থাৎ পরবর্তী দিনে এই মামলার পুনরায় শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর নজর এখন হাইকোর্টের পরবর্তী নির্দেশের দিকে।
Follow Us














