Primary TET 2017: পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সামনে এক নতুন এবং অদ্ভুত সমস্যা এসে হাজির হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নের জন্য পরীক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা কার্যকর করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পর্ষদ। কারণ, নম্বর দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় নথিপত্র এবং ডিজিটাল ডেটা বর্তমানে পর্ষদের হাতে নেই, তা রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বা সিবিআইয়ের হেফাজতে।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের স্বার্থে আগেই সিবিআই পর্ষদ অফিস থেকে সার্ভার, হার্ডডিস্ক এবং ওএমআর শিট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বাজেয়াপ্ত করেছিল। এখন আদালতের রায় মেনে কাদের নম্বর বাড়াতে হবে, সেই তথ্য খুঁজে পেতেই কালঘাম ছুটছে আধিকারিকদের।
আদালতের নির্দেশ ও পর্ষদের অসহায়তা
গত ২৪ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয়। ২০১৭ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় পরিবেশবিদ্যা বিভাগের একটি প্রশ্নের চারটি অপশনই ভুল ছিল বলে প্রমাণিত হয়। আদালত নির্দেশ দেয়, যে সমস্ত পরীক্ষার্থী ওই নির্দিষ্ট প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের সকলকেই পূর্ণ নম্বর দিতে হবে। এবং এই নম্বর বাড়ার ফলে যদি কেউ টেট উত্তীর্ণ হন, তবে তাঁকে চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ করে দিতে হবে।
পর্ষদ আদালতের এই রায়কে সম্মান জানিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু পর্ষদের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা নম্বর দিতে প্রস্তুত, কিন্তু সমস্যা হল ‘কাকে’ নম্বর দেবেন? ওই নির্দিষ্ট ভুল প্রশ্নটি কোন কোন পরীক্ষার্থী অ্যাটেন্ড করেছিলেন, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য বা ডেটাবেস এই মুহূর্তে পর্ষদের অফিসে নেই।
সিবিআইয়ের কাছে তথ্যের চাবিকাঠি
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চলাকালীন সিবিআই ২০১৭ সালের নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত হার্ডডিস্ক এবং ডিজিটাল নথি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। পর্ষদের দাবি অনুযায়ী:
- হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত: পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র এবং ওএমআর শিট সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য যে হার্ডডিস্কগুলিতে সংরক্ষিত ছিল, তা এখন সিবিআইয়ের মালখানায়।
- তৃতীয় পক্ষের কাছেও তথ্য নেই: পর্ষদ ফল প্রকাশের জন্য যে থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষের সংস্থার সাহায্য নিয়েছিল, তাদের কাছেও এই মুহূর্তের প্রয়োজনীয় ব্যাকআপ তথ্য নেই।
ফলে পর্ষদ জানতেই পারছে না কাদের নম্বর বাড়াতে হবে। সম্পূর্ণ বিষয়টি এখন সিবিআইয়ের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
এই জটিলতা কাটাতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ইতিমধ্যেই সিবিআইকে চিঠি লিখে প্রয়োজনীয় তথ্য ফেরত চেয়েছে বা তথ্য দিয়ে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছে। পর্ষদের যুক্তি, আদালতের নির্দেশ পালন করতে হলে ওই ডেটা অপরিহার্য। যতদিন না সিবিআইয়ের কাছ থেকে সেই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত নম্বর বাড়ানো এবং তার ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীদের খুঁজে বের করা সম্ভব নয়।
সূত্রের খবর, যদি সিবিআইয়ের তরফ থেকে সময়মতো তথ্য না পাওয়া যায়, তবে পর্ষদ পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। সেখানে তারা নিজেদের অসহায়তার কথা তুলে ধরে আদালতের কাছে পরবর্তী নির্দেশ চাইতে পারে। সব মিলিয়ে, আদালতের রায় পরীক্ষার্থীদের পক্ষে গেলেও, প্রযুক্তিগত এবং তদন্তের গেরোয় আটকে রয়েছে নিয়োগের ভাগ্য।














