SIM Binding Rule: হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের জন্য কড়া সতর্কতা! ফোনে সিম না থাকলে চলবে না অ্যাপ, জারি সরকারি নির্দেশিকা

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

SIM Binding Rule: ভারতের কোটি কোটি হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) এবং টেলিগ্রাম (Telegram) ব্যবহারকারীদের জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খবর সামনে এসেছে। ডিজিটাল জালিয়াতি এবং সাইবার ক্রাইম রুখতে এবার নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিল ভারতের টেলিযোগাযোগ দপ্তর (DoT)। নতুন সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, এবার থেকে ফোনে সক্রিয় সিম কার্ড না থাকলে আর চালানো যাবে না কোনো মেসেজিং অ্যাপ। এতদিন একটি ফোনে সিম কার্ড ঢুকিয়ে ওটিপি (OTP) ভেরিফাই করার পর সেই সিমটি খুলে ফেললেও ওয়াই-ফাই বা অন্য ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে দিব্যি মেসেজিং অ্যাপ চালানো যেত। কিন্তু সরকারের নতুন ‘সিম বাইন্ডিং’ (SIM Binding) প্রযুক্তির আওতায় এই সুবিধা আর পাওয়া যাবে না।

কী এই নতুন নিয়ম?

টেলিযোগাযোগ দপ্তরের জারি করা ‘টেলিকমিউনিকেশন সাইবার সিকিউরিটি অ্যামেন্ডমেন্ট রুলস, ২০২৫’ অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যাল বা স্ন্যাপচ্যাটের মতো অ্যাপগুলিকে এখন থেকে টেলিকম সংস্থাগুলির মতো কড়া নিয়ম মেনে চলতে হবে। এই অ্যাপগুলিকে “টেলিকমিউনিকেশন আইডেন্টিফায়ার ইউজার এনটিটি” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নতুন নিয়মের প্রধান শর্তগুলি হলো:

  • সিম বাইন্ডিং প্রযুক্তি: ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের সাথে তার সিম কার্ডের সংযোগ সব সময় সক্রিয় থাকতে হবে। অর্থাৎ, যে নম্বর দিয়ে আপনি হোয়াটসঅ্যাপ খুলেছেন, সেই সিম কার্ডটি যদি ফোন থেকে বের করে নেওয়া হয় বা সিমটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে আপনার ফোনে ওই অ্যাপটি কাজ করা বন্ধ করে দেবে।
  • বাধ্যতামূলক উপস্থিতি: অ্যাপগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে যে ব্যবহারকারীর পরিষেবাটি নিবন্ধিত সিম কার্ডের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। সিম কার্ড ছাড়া অ্যাপ ব্যবহারের দিন শেষ হতে চলেছে।

হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন

যারা ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে ‘হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব’ ব্যবহার করেন, তাদের জন্যও বড়সড় পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। এখন একবার লগ-ইন করলে দিনের পর দিন তা চালু থাকে। কিন্তু নতুন নিয়মে প্রতি ৬ ঘণ্টা অন্তর ওয়েব ব্রাউজার থেকে ব্যবহারকারীকে অটোমেটিক লগ-আউট করে দেওয়া হবে। পুনরায় ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীকে তার মূল মোবাইল ফোন থেকে কিউআর কোড (QR Code) স্ক্যান করে আবার লগ-ইন করতে হবে। এর ফলে হ্যাকাররা বা অন্য কেউ আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ব্যবহার করতে পারবে না।

কেন এই কঠোর সিদ্ধান্ত?

সাইবার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমাতেই মূলত এই কঠোর পদক্ষেপ। দেখা গেছে, প্রতারকরা অনেক সময় ভুয়া বা অন্যের নামে তোলা সিম কার্ড দিয়ে মেসেজিং অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলে এবং পরে সিমটি ফেলে দেয়। সিম কার্ডটি ফোনের বাইরে থাকলেও অ্যাপটি সচল থাকায় তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অবাধে প্রতারণা চালিয়ে যায়। যেহেতু সিমটি তখন আর নেটওয়ার্কে থাকে না, তাই পুলিশ বা গোয়েন্দাদের পক্ষে অপরাধীকে ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে।

ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই সাইবার জালিয়াতির কারণে ভারতবাসী গড়ে প্রতি মাসে ১,০০০ কোটি টাকা হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি সাইবার হামলা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি থেকে। এই জালিয়াতির লাগাম টানতেই সিম কার্ডের সাথে অ্যাপের সংযোগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কবে থেকে কার্যকর হবে এই নিয়ম?

নির্দেশিকা জারির ৯০ দিনের মধ্যে সমস্ত মেসেজিং প্ল্যাটফর্মকে এই ‘সিম বাইন্ডিং’ প্রযুক্তি চালু করতে হবে এবং ১২০ দিনের মধ্যে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দিতে হবে। রিলায়েন্স জিও, এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়ার মতো টেলিকম সংস্থাগুলির সংগঠন (COAI) এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, মোবাইল নম্বরই হলো ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ডিজিটাল পরিচয়, তাই অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এর স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। তবে মেটা (Meta) বা অন্য কোনো অ্যাপ সংস্থা এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন