SIR Voter List: পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন বা এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। গত ১১ই ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ ছিল এনুমেরেশন ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন। নির্বাচন কমিশনের তৎপরতায় এই সংশোধনী প্রক্রিয়ায় রাজ্যে বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছে। আগামী ১৬ই ডিসেম্বর প্রকাশিত হতে যাওয়া খসড়া তালিকায় কাদের নাম থাকছে আর কাদের বাদ পড়ছে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বিশেষ করে শুনানির জন্য কাদের ডাকা হবে, সেই বিষয়টি এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটারের পরিসংখ্যান
নির্বাচন কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এবারের এসআইআর প্রক্রিয়ায় সারা রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫৮ লক্ষ ৮২ হাজার ২০২ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হতে পারে। যদিও এই সংখ্যায় সামান্য রদবদল হতে পারে, তবে বড়সড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। বিভিন্ন কারণে এই নামগুলি বাদ দেওয়া হয়েছে, যার একটি বিস্তারিত পরিসংখ্যান নিচে দেওয়া হলো:
| বাদ পড়ার কারণ | আনুমানিক সংখ্যা |
|---|---|
| মৃত ভোটার | ২৪,১৮,৬৯৯ জন |
| ঠিকানা পরিবর্তনকারী/ ডবল এন্ট্রি | ১৯,৯৩,৮৭৮ জন |
| নিখোঁজ ভোটার (Not Found) | ১২,১৪,০৬২ জন |
| ভুয়ো ভোটার | ১,৩৭,৫৭৫ জন |
| অন্যান্য কারণ | ৫৭,৫০৯ জন |
বিশেষ উল্লেখ্য যে, প্রায় ১২ লক্ষ ১৪ হাজার ভোটারের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিএলও (BLO) বা কমিশনের আধিকারিকরা একাধিকবার বাড়িতে গিয়েও তাদের সন্ধান পাননি।
ভোটারদের ম্যাপিং ক্যাটাগরি ও শুনানির নিয়ম
কমিশন ২০০২ সালের ভোটার তালিকার ওপর ভিত্তি করে বর্তমান ভোটারদের তিনটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। এই বিভাজনটি শুনানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
১. নিজস্ব ম্যাপিং (Own Mapping): রাজ্যের প্রায় ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৮৮ জন ভোটার এই তালিকায় আছেন। এদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ছিল এবং বর্তমানেও তারা জীবিত।
২. প্রজনি ম্যাপিং (Progeny Mapping): প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৩৯ জন ভোটার এই ক্যাটাগরিতে পড়েছেন। ২০০২ সালে এদের নাম না থাকলেও, এদের বাবা-মা বা দাদু-ঠাকুমার নাম সেই সময়ের তালিকায় ছিল।
৩. নন-ম্যাপিং (Non-Mapping): এটিই সবথেকে স্পর্শকাতর তালিকা। রাজ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ এমন ভোটার আছেন, যাদের নিজেদের বা তাদের পূর্বপুরুষদের (বাবা-মা, দাদু-ঠাকুমা) কারোর নামই ২০০২ সালের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শুনানির জন্য কাদের ডাকা হবে?
কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ‘নন-ম্যাপিং’ তালিকায় থাকা ওই ৩০ লক্ষ মানুষকে শুনানির জন্য তলব করা হবে। এটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া। শুনানির সময় তাদের প্রমাণ দিতে হবে যে তারা কোথা থেকে এসেছেন এবং কেন তাদের বা তাদের পূর্বপুরুষের নাম পুরনো তালিকায় নেই। উপযুক্ত নথিপত্র এবং তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হবে কি না, তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া, প্রথম দুটি ক্যাটাগরি (নিজস্ব ও প্রজনি ম্যাপিং) থেকেও যদি কোনো ভোটারের তথ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়, তবে কমিশন তাদেরও শুনানির জন্য ডাকতে পারে।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও তারিখ
ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপগুলো নিম্নরূপ:
- খসড়া তালিকা প্রকাশ: আগামী ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে।
- অভিযোগ জানানোর সময়: খসড়া তালিকা প্রকাশের পর যদি কেউ দেখেন তাদের নাম বাদ পড়েছে বা তথ্যে ভুল আছে, তবে ১৬ তারিখের পর বিডিও (BDO), এসডিও (SDO) বা ডিএম (DM) অফিসে গিয়ে অভিযোগ জানানো যাবে।
- চূড়ান্ত তালিকা: সমস্ত শুনানি ও তথ্য যাচাই প্রক্রিয়ার পর ২০২৬ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়ার সময়সীমা আর বাড়ানো হয়নি। ১৬ই ডিসেম্বরের পর কাদের বাড়িতে শুনানির নোটিশ পৌঁছায় এবং ৩০ লক্ষ নন-ম্যাপিং ভোটারের ভবিষ্যৎ কী হয়, সেদিকেই এখন সবার নজর।














