SSC দুর্নীতি: সিবিআই রিপোর্টে ফাঁস চাঞ্চল্যকর তথ্য, ১৭ রকম পদ্ধতিতে হতো দুর্নীতি! বদলির ভয়, নিজের মেয়েকে কাজে লাগানো

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

SSC Recruitment Scam: স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) এর শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের পেশ করা রিপোর্টে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জড়িত থাকার অভিযোগ এই দুর্নীতিকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। কীভাবে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হতো এবং এর পেছনে কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল, তা নিয়েই এই বিস্তারিত প্রতিবেদন।

দুর্নীতির জাল বোনা হয়েছিল কীভাবে?

সিবিআই রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দুর্নীতির মূল উদ্দেশ্যই ছিল অযোগ্য প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া। এর জন্য প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এক সুচিন্তিত পরিকল্পনা করেছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, তিনি অশোক সাহাকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব পদে নিয়োগ করেন। সিবিআইয়ের দাবি, এই নিয়োগের প্রধান কারণই ছিল দুর্নীতির পথকে আরও সহজ করা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তার ব্যক্তিগত সচিব প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, এসএসসির তৎকালীন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং অশোক সাহা একসঙ্গে মিলে এই দুর্নীতির জাল বুনতেন।

কীভাবে চলত এই প্রক্রিয়া?

সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে যে, একটি প্রভাবশালী সুপারিশের তালিকা তৈরি করা হতো, যেখানে অযোগ্য প্রার্থীদের নাম থাকত। সেই তালিকা অনুযায়ী চাকরি নিশ্চিত করতে একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো:

  • শূন্যপদ তৈরি: তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় নতুন শূন্যপদ তৈরির জন্য আধিকারিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন। এমনকি, তিনি আধিকারিকদের শাসাতেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • নিয়োগপত্র প্রদান: করোনা অতিমারির সময়েও, ২০২০ সালে, শিক্ষা দপ্তরের একটি নবনির্মিত অফিসে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া হতো।
  • চাপ সৃষ্টি ও বদলি: যদি কোনো আধিকারিক এই বেআইনি কাজের সঙ্গে আপোস করতে না চাইতেন বা হাতে লেখা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগপত্র তৈরি করতে রাজি না হতেন, তাকে তৎক্ষণাৎ কলকাতা থেকে দূরের কোনো জেলায় বদলি করে দেওয়া হতো।

পরীক্ষা না দিয়েই চাকরি!

সিবিআইয়ের রিপোর্টে সবথেকে চাঞ্চল্যকর যে তথ্যটি উঠে এসেছে, তা হলো বহু অযোগ্য প্রার্থী কোনো পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই চাকরি পেয়েছেন। এর ফলে, তাদের কোনো OMR শিটও ছিল না। প্রমাণ লোপাট করার জন্য ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সমস্ত OMR শিট নষ্ট করে ফেলা হয়। শুধু তাই নয়, শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও অনেককে তাদের পছন্দমতো স্কুলে নিয়োগের জন্য মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হতো।

আত্মীয়দের নিয়োগ ও তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একাধিক কৌশল নেওয়া হয়েছিল। অশোক সাহা নিজের মেয়েকে আরটিআই (RTI) দপ্তরে নিয়োগ করেছিলেন, যাতে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে কোনো তথ্য বাইরে ফাঁস না হয়। যেহেতু প্যানেলের যোগ্য প্রার্থীরা অনেকেই আরটিআই করছিলেন, তাই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে সিবিআই মনে করছে।

কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়েও প্রায় ১৭ রকম দুর্নীতির পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা এই অভিযোগকে আরও শক্তিশালী করে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর একটি গভীর কালো দাগ ফেলেছে এবং এর সম্পূর্ণ তদন্তের দিকেই এখন সকলের নজর।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন