SSC 2016 Case: কলকাতা হাইকোর্টের এজলাসে এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্য। স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসির ২০১৬ সালের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় নাটকীয় মোড় নিল শুনানির গতিপথ। বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রথমে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্যানেলের ‘বৈধ’ বা ‘আনটেইন্টেড’ (untainted) প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিলেও, দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পর শেষমেশ নিজের সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিলেন। মঙ্গলবার দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা এই শুনানিতে মামলাকারী এবং কমিশনের আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদের পর আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
এজলাসে ঠিক কী ঘটেছিল?
মামলার শুনানির শুরুতেই মূল আবেদনকারীদের আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জী আদালতের কাছে একটি বিশেষ আর্জি জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে যারা সততার সঙ্গে এবং কোনো দুর্নীতি ছাড়াই চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট—সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০২৫ সালের আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাতে কোনোভাবেই অযোগ্য বা ‘টেইন্টেড’ প্রার্থীরা অংশ নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই বৈধ তালিকা প্রকাশ করা জরুরি। এছাড়া ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র প্রকাশের দাবিও তোলা হয়।
কমিশনের আইনজীবীর পাল্টা যুক্তি ও সুপ্রিম কোর্টের প্রসঙ্গ
এসএসসির হয়ে সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ ব্যানার্জী। তিনি আদালতের নির্দেশ এবং মামলাকারীদের দাবির তীব্র বিরোধিতা করেন। কমিশনের তরফে স্পষ্ট জানানো হয় যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই ইতিমধ্যেই অযোগ্য বা ‘টেইন্টেড’ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
কমিশনের আইনজীবীর প্রধান যুক্তিগুলি ছিল নিম্নরূপ:
- বর্তমানে যারা স্কুলে কর্মরত আছেন (৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত), তাঁদের প্রত্যেককেই কমিশন বৈধ হিসেবে গণ্য করছে।
- নতুন করে আবার ‘বৈধ’ তালিকা প্রকাশ করার দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং এটি একটি ‘Roving Inquiry’ বা অহেতুক তদন্তের শামিল।
- বারবার নতুন তালিকা প্রকাশের দাবি তুলে মূল নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
বিচারপতির নির্দেশ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
শুনানির এক পর্যায়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহা পর্যবেক্ষণ করেন যে, প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সার্ভিস রুলস অনুযায়ী তা সঠিক নয়। এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি প্রথমে কমিশনকে বৈধ প্রার্থীদের এবং এক্সপায়ারি প্যানেলের পর নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এই নির্দেশ দেওয়া মাত্রই এজলাসে আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র হট্টগোল শুরু হয়।
এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ ব্যানার্জী প্রশ্ন তোলেন, হলফনামা জমা দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই কেন সরাসরি এমন নির্দেশ দেওয়া হবে? অন্যদিকে, চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবীরাও (যেমন মেনকা গুরুস্বামী, প্রতীক ধর) তাঁদের মক্কেলদের পক্ষ রাখার দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত আইনি জটিলতা এড়াতে বিচারপতি সিনহা মন্তব্য করেন যে, এখন তাড়াহুড়ো করে তালিকা প্রকাশ করলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। কেউ দাবি করতে পারেন যে তিনি বৈধ হওয়া সত্ত্বেও তালিকায় নাম নেই। এই যুক্তিতেই তিনি তাঁর আগের নির্দেশ প্রত্যাহার বা ‘ডিলিট’ করেন।
নিচে শুনানির মূল বিষয়বস্তু একটি তালিকার মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:
| পক্ষ | মূল যুক্তি/দাবি |
|---|---|
| মামলাকারী | ২০২৫-এর নিয়োগ স্বচ্ছ রাখতে ২০১৬-র বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ জরুরি। |
| এসএসসি (কমিশন) | সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘টেইন্টেড’ তালিকা দেওয়া হয়েছে। নতুন তালিকা বিভ্রান্তি বাড়াবে। |
| আদালতের সিদ্ধান্ত | আপাতত কোনো তালিকা প্রকাশ করতে হবে না, কমিশনকে হলফনামা জমা দিতে হবে। |
চূড়ান্ত আপডেট: আগামী ১৩ই জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয়েছে। ততদিন পর্যন্ত কোনো নতুন তালিকা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রইল না এসএসসির ওপর।














