SSC Case Hearing: পশ্চিমবঙ্গের বহুচর্চিত স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে ফের উঠে এল চাঞ্চল্যকর সব তথ্য ও যুক্তি। সুপ্রিম কোর্টে চলা এই মামলায় চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট অনিন্দ্য কুমার মিত্র এবং প্রতীক ধর মহাশয়ের সওয়াল-জবাবে আদালতের পরিবেশ সরগরম হয়ে ওঠে। মূলত প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া এবং অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বরের যৌক্তিকতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
১০ নম্বর নিয়ে অনিন্দ্য মিত্রের আইনি ব্যাখ্যা
মামলায় অভিজ্ঞ শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বরের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিনিয়র অ্যাডভোকেট অনিন্দ্য কুমার মিত্র আদালতের সামনে এই ১০ নম্বরের স্বপক্ষে জোরালো যুক্তি পেশ করেন। তাঁর মতে, আইনসভা বা লেজিসলেচার যে আইন তৈরি করেছে এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ যে রুলস বা নিয়মাবলি তৈরি করেছে, তার মধ্যে কোনও বিরোধ থাকা উচিত নয়। বরং দুটির মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে আইনের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে তা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল বা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
টিচিং এক্সপেরিয়েন্স বা অভিজ্ঞতার গুরুত্ব
অনিন্দ্য বাবু যুক্তি দেন যে, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে শুধুমাত্র সময়ের মাপকাঠি হিসেবে দেখলে চলবে না। এটি আদতে একটি বিশেষ দক্ষতা বা ‘স্কিল’। একজন সদ্য পাশ করা বা ফ্রেশার প্রার্থীর তুলনায় একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক স্বাভাবিকভাবেই শ্রেণিকক্ষে অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় দেবেন। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞদের জন্য আলাদা নম্বর বরাদ্দ রাখা বা তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া সম্পূর্ণ যৌক্তিক। নিজের যুক্তির স্বপক্ষে তিনি একাধিক রাজ্যের উদাহরণ টেনে আনেন।
তিনি আদালতকে জানান যে, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ছত্তিশগড়, বিহার, চণ্ডীগড়, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলিতেও অভিজ্ঞতার জন্য আলাদা নম্বর দেওয়ার প্রথা রয়েছে। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারের নবোদয় বিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও এই নিয়ম মানা হয়। এছাড়াও, সুপ্রিম কোর্টের অরুণিমা পাল মামলার রায় এবং পূর্ববর্তী নির্দেশগুলিও এই ১০ নম্বর দেওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্যানেলের মেয়াদ ও যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চনা
অন্যদিকে, সিনিয়র অ্যাডভোকেট প্রতীক ধর মূলত যোগ্য বা ‘আন-টেন্টেড’ প্রার্থীদের হয়ে সওয়াল করেন। তিনি সিবিআই-এর রিপোর্ট এবং এসএসসি সার্ভারের তথ্যের মধ্যে থাকা অসঙ্গতিগুলি বিচারপতির সামনে তুলে ধরেন। সিবিআই-এর উদ্ধার করা পঙ্কজ বঁশালের হার্ডডিস্কের তথ্য এবং এসএসসির সার্ভারের তথ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, পঙ্কজ বঁশালের কাছে থাকা তথ্য সঠিক হলেও, এসএসসির সার্ভারের তথ্যে কারচুপি বা ম্যানিপুলেশন করা হয়েছে।
প্রতীক ধরের সওয়ালের মূল বিষয়গুলি:
- তথ্যের মিশ্রণ: তিনি বোঝান যে, এসএসসির সার্ভারে থাকা তথ্যের মধ্যে যোগ্য এবং অযোগ্য বা দুর্নীতিগ্রস্ত—উভয় ধরণের প্রার্থীর তথ্য মিশে গিয়েছে। এর ফলে যাঁরা সততার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছেন, সেই যোগ্য প্রার্থীরাও আজ ভুক্তভোগী।
- ওয়েটিং লিস্টের প্রার্থীদের অধিকার: একজন ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থী সবসময় আশা করেন যে তিনি চাকরি পাবেন। কিন্তু কমিশনের আইনি জটিলতা বা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে যদি কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়, তবে তার দায় কিছুতেই প্রার্থীর ওপর বর্তানো উচিত নয়।
- ১০ নম্বরের গাণিতিক যুক্তি: শুনানির শেষের দিকে তিনিও ১০ নম্বরের পক্ষেই কথা বলেন। তিনি গাণিতিক হিসেব কষে বুঝিয়ে দেন যে, অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ এই নম্বরটি একজন প্রার্থীর দক্ষতাকেই নির্দেশ করে, যা কমিশনেরও কাম্য হওয়া উচিত।
বিচারপতি এই সমস্ত যুক্তি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং বিষয়গুলির গভীরতা অনুধাবন করেন। জানা গিয়েছে, এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার অর্থাৎ ৮ ও ৯ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে আরও কয়েকজন আইনজীবী তাঁদের বক্তব্য পেশ করবেন। লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী এখন সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন।














