SSC Interview List: এসএসসি (SSC) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে নতুন ইন্টারভিউ তালিকা এবং যাচাইকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে জোরদার সওয়াল-জবাব হয়। কলকাতা হাইকোর্টের ১৮ নম্বর কোর্টে অনুষ্ঠিত এই শুনানিতে বিচারপতি স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। মামলাকারীদের অভিযোগ এবং কমিশনের যুক্তির দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর, আদালত শেষ পর্যন্ত স্বচ্ছতার পক্ষেই রায় দিয়েছে।
শুনানির কেন্দ্রে একাধিক গুরুতর অভিযোগ
শুনানির শুরুতেই মামলাকারীদের আইনজীবীরা, বিশেষ করে প্রতীক দাস এবং বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত প্রার্থীদের ‘টেইনটেড’ বা অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেকের নাম আশ্চর্যজনকভাবে নতুন ইন্টারভিউ তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নাম নতুন তালিকায় দেখা গেছে:
- নীতিশ রঞ্জন বর্মন
- দেবলিনা মন্ডল
- নারায়ণ চন্দ্র
- জয়নাল আবেদিন
যদিও কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে এই প্রার্থীদের রোল নম্বর ভিন্ন, মামলাকারীরা পাল্টা যুক্তি দেন যে রোল নম্বর আলাদা হলেও ব্যক্তি একই হতে পারে। এই জটিলতা দূর করার জন্য আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য দাবি করেন যে, শুধুমাত্র নাম বা রোল নম্বর যথেষ্ট নয়। প্রার্থীদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য তাদের OMR শিট, বাবার নাম এবং ক্যাটাগরি সহ সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ্যে আনতে হবে।
কমিশনের যুক্তি ও বিচারপতির নির্দেশ
কমিশনের পক্ষে সওয়াল করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই প্রতিবন্ধী (PH) প্রার্থীদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, মামলাকারীরা অহেতুক জটিলতা তৈরি করে আদালতের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
উভয় পক্ষের যুক্তি শোনার পর বিচারপতি স্পষ্ট এবং কড়া নির্দেশিকা জারি করেন। তার মূল লক্ষ্য ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।
আদালতের প্রধান নির্দেশগুলি হলো:
- বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ: কমিশনকে অবিলম্বে ২০২৫ সালের ইন্টারভিউ তালিকায় থাকা সকল প্রার্থীর বাবার নাম, OMR এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ একটি বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
- যাচাইকরণ প্রক্রিয়া: ২০১৬ সালের ‘টেইনটেড’ তালিকার সঙ্গে বর্তমান তালিকাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেলাতে হবে।
- অযোগ্যদের অপসারণ: যদি যাচাইয়ের সময় দেখা যায় যে কোনো অযোগ্য প্রার্থী নতুন তালিকায় ঢুকে পড়েছে (“slip through the net”), তবে তাকে অবিলম্বে নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে।
- সুপ্রিম কোর্টের রায় মান্যতা: বিচারপতি পুনরায় মনে করিয়ে দেন যে, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী কোনো অযোগ্য প্রার্থী, এমনকি তিনি প্রতিবন্ধী ক্যাটাগরির হলেও, নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনো স্তরেই সুযোগ পেতে পারেন না।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৮ তারিখের পরিবর্তে ২৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে বলে ধার্য করা হয়েছে, কারণ আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের ওইদিন সময়ের অভাব ছিল। আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী শুনানিতে কমিশন আদালতের নির্দেশ মেনে বিস্তারিত তথ্য পেশ করবে।














