SSC Scam: এসএসসি দুর্নীতি মামলায় (SSC Scam Case) একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে সিবিআই-এর এক সাক্ষীর বয়ানে এমনই কিছু বিস্ফোরক তথ্য সামনে এল, যা নিয়োগ দুর্নীতির গভীরতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কীভাবে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগপত্র নিয়ে স্কুলে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, সেই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন ওই আধিকারিক। এমনকি, এই মামলার শিরোনামে উঠে আসা ‘পেন্সিলে নথি লেখা’র মতো অভিযোগও রয়েছে, যা দুর্নীতির পদ্ধতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
আদালতে সাক্ষীর চাঞ্চল্যকর বয়ান
সিবিআই-এর সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির হয়েছিলেন এক আধিকারিক। তিনি তাঁর সাক্ষ্যে জানান যে, প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও বহু চাকরিপ্রার্থী বিভিন্ন স্কুলে নিয়োগপত্র নিয়ে হাজির হচ্ছিলেন। এই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা দফতরের কাছে রিপোর্ট পাঠাতে শুরু করে।
ওই আধিকারিক আদালতকে জানান:
- মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল: প্যানেলের বৈধতা শেষ হয়ে গেলেও চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগপত্র নিয়ে স্কুলে স্কুলে যাচ্ছিলেন।
- কাজে যোগদানের দাবি: তাঁরা স্কুলে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছিলেন, যা সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ ছিল।
- স্কুলগুলির রিপোর্ট: এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখে বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষা দফতরের কাছে রিপোর্ট জমা পড়তে শুরু করে।
এই সমস্ত ঘটনাই প্রমাণ করে যে, একটি সমান্তরাল ব্যবস্থা কাজ করছিল, যেখানে নিয়মের কোনও তোয়াক্কা করা হয়নি। আধিকারিক জানান, তদন্ত চলাকালীন এই সমস্ত তথ্য তিনি সিবিআই-কে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছিলেন।
উচ্চপদস্থদের জানানো এবং তার প্রতিক্রিয়া
সাক্ষ্য দিতে গিয়ে ওই আধিকারিক আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি জানান যে, স্কুলগুলি থেকে এই ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি চুপ করে বসে থাকেননি। তৎকালীন শিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের তিনি ইমেল করে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি চেয়েছিলেন, এই বেনিয়মের বিরুদ্ধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কিন্তু এর ফল হয় উল্টো। ইমেল করার পরেই তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। ফোনটি করেছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওএসডি (OSD) প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ওই আধিকারিকের কাছে জানতে চান, কেন উচ্চপদস্থদের না জানিয়ে সরাসরি ইমেল করা হল। এই ফোন কলটি কার্যত এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে, যাতে এই দুর্নীতির কথা ধামাচাপা দেওয়া যায়।
দুর্নীতির গভীরতা
এই সাক্ষ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি শুধুমাত্র কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এর শিকড় ছিল প্রশাসনের অনেক গভীরে।
- মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নিয়োগপত্র জারি করা।
- এই বিষয়ে অভিযোগ জানালে অভিযোগকারীকে ফোন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা।
- নথি পেন্সিলে লেখার মতো অভিযোগ, যা প্রমাণ লোপাটের সুযোগ করে দেয়।
সব মিলিয়ে, এই আধিকারিকের সাক্ষ্য এসএসসি দুর্নীতি মামলার তদন্তে একটি নতুন মাত্রা যোগ করল। আগামী দিনে এই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কোন দিকে গড়ায়, সেদিকেই সকলের নজর থাকবে।














