জন সাধারণের জন্য দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন মতিলাল শীল ! জানুন ঐতিহাসিক কাহিনী

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী : বনেদি বাড়ির পুজো হলেও সাধারণ মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে ওতপ্রোত ভাবে। প্রায় ২০০ বছর আগে মতিলাল শীল তাঁর বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনাই করেছিল জন সাধারণকে পুজো দেখার সুযোগ দেওয়ার জন্যে। অতীতে রাজবাড়ির পুজো মানে রাজকীয় আয়োজন, সাহেব আর উচ্চবর্ণের মানুষের আনাগোনা। সাধারণ মানুষের জায়গাই ছিল না। এমন কথা শোনামাত্র দুর্গাপুজো করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন ধনাঢ্য জমিদার মতিলাল শীল।

কম বয়সে পিতৃহারা মতিলাল ছিলেন বুদ্ধিমান এবং করিৎকর্মা। এমন কোনও ব্যবসা ছিল না, যাতে মতিলাল শীল বিনিয়োগ করেননি। কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছিল ১৮১৫ সালে। ফোর্ট উইলিয়ামে কাজে যোগ দিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার বরাত পেয়েছিলেন। বেশ কিছু বিদেশি এজেন্সি তাঁকে ‘বেনিয়ান’ হিসাবে নিয়োগ করেছিল। হাওড়া, কলকাতা, বাগনান, মেদিনীপুর, বাংলাদেশ, ভাগলপুর-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারি বিস্তার করেছিলেন মতিলাল শীল।

avilo home

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উন্নতি কল্পে মতিলাল ১২ হাজার টাকা দান করেন। সমাজ সংস্কারেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তখন বিধবা বিবাহ এবং সতীদাহ নিয়ে উত্তাল ছিল বাংলা। রাধাকান্ত দেব এবং রামমোহন রায়ের দলের মধ্যে যখন চূড়ান্ত আদর্শগত বিরোধ চলছে। ধর্মসভার সদস্য হওয়া সত্ত্বেও বিধবা বিবাহের উপযোগিতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মতিলাল শীল।

মতিলাল শীলের মূল বসতবাড়ি তাঁর ছোটছেলে কানাইলাল শীলের ভাগে পড়েছিল। কিন্তু তাঁর পুত্র গোপাললালের কোনও সন্তান না থাকায় ভাগ্নেরা এই বাড়ি পান। তাঁরাই বর্তমানে পালা করে পুজো করেন। আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় পুজো। এছাড়াও পুজোর প্রতিটি দিন ২৮টি পাত্রে একমণ করে চাল কলা মিষ্টি-সহ নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হয়। বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ায় শীলবাড়ির পুজোতে বলির নিয়ম নেই। আখ, চাল-কুমরো, বাতাবি লেবু বলির জন্য সাজিয়ে পুজোর সময়ে ঠাকুরদালানে দিয়ে দেওয়া হয়।

শীল বাড়িতে অন্নভোগ হয় না। পুজোর দিনগুলিতে ঠাকুরদালানের উল্টোদিকে দোতলা ঘরে বসত বাঈনাচের আসর। আগে প্রায় দেড়শো জন ব্রাহ্মণকে নানা দানসামগ্রী, সুপুড়ি আর টাকা দিয়ে ব্রাহ্মণ-বিদায় করা হত। এখন দশ-বারো জন মাত্র ব্রাহ্মণ আসেন ব্রাক্ষণ বিদায়ের জন্য। শীলবাড়িতে সিঁদুর খেলায় অত ঘটা হয় না। মতিলাল শীলের বাড়ির ঠাকুর ১৯৪৫ সাল অবধি কাঁধে করে বিসর্জন হত। তবে ৪৬-এর দাঙ্গায় সেই নিয়ম পাল্টে যায়। ওইবছর বাড়ির মূল দরজা বন্ধ রেখে বাইরে সশস্ত্র পুলিশ বসিয়ে পুজো সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু ঠাকুর আর কাঁধে করে পাঠানো যায়নি গঙ্গায়। এখন গাড়ি করেই গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বিসর্জন হয়।

আরও খবর পেতে ফলো করুন আমাদের চ্যানেল

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন