Bangla News Dunia , Rajib : গোড়া থেকেই বিজেপির ‘আদব–কায়দার’ সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা পড়ছেন দলে নতুন নাম লেখানো নেতারা। ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান’ পর্বে বিজেপির অন্দরের সেই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। যার আঁচ পড়েছে অমিত শাহদের বেঁধে দেওয়া টার্গেট ছোঁয়ার দৌড়েও। খাতায়–কলমে বিজেপি সব থেকে শক্তিশালী শুভেন্দু অধিকারীর পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে এই জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টি বিজেপির দখলে। জেলার দুটি লোকসভা আসন কাঁথি এবং তমলুকে বিজেপির সাংসদ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযানে’ এই জেলার বিজেপি নেতারা নজর কাড়তে পারেননি। একই অবস্থা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরেও। ওই আসনটি বিজেপির দখলে থাকলেও সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পিছিয়ে দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলার থেকেই।
বিজেপির পর্যালোচনায় উঠে এসেছে যে, ২০১৯–এর পরে দলে নাম লেখানো নেতাদের একটা বড় অংশ দলের অন্যান্য কর্মসূচিতে যতটা সক্রিয় ততটা সদস্য সংগ্রহ অভিযানের ক্ষেত্রে নয়।
কিন্তু এ রকম কেন হচ্ছে? শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতার জেলায় কেন সদস্য সংগ্রহের নিরিখে পিছিয়ে থাকবে বিজেপি? যিনি গোটা রাজ্য ছুটছেন সংগঠন মজবুত করতে, তাঁর জেলাতেই কেন জোশ পাচ্ছে না দলীয় অভিযান? বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ’র ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন। সম্প্রতি তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে সৌমিত্র সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বস্তুত, তাঁর পরিশ্রমের ওপর বাজি ধরে এই বিধানসভা কেন্দ্র দখল করার স্বপ্নও দেখছেন পদ্ম–নেতৃত্ব। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের মতো সৌমিত্রর লোকসভা কেন্দ্র বিষ্ণুপুরেও দেখা যাচ্ছে না ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযানে’ ঝড়ো গতি। বাংলা থেকে এক কোটি সদস্যের টার্গেট নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংগঠনিক জেলায় তিন লক্ষ করে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। একইভাবে বিষ্ণুপুর লোকসভা এলাকাতেও তিন লক্ষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:- ২১৩ কোটি জরিমানা, ৫ বছর ব্যান! ভারতে বড় ধাক্কা খেল Meta
সূত্রের খবর, তিনটি জায়গাতেই টার্গেট থেকে বহু দূরে বিজেপি। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার ব্যাখ্যা, ‘মিসডকল দিয়ে সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর যে চল বিজেপিতে আছে, তার কার্যকরিতা নিয়ে আমাদের মতো শুভেন্দুদার মনেও প্রশ্ন আছে। উনি লড়াকু বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চলতে চান। ঘরে বসে মিসডকল দিয়ে যাঁরা বিজেপির সদস্য হন, তাঁদের উপর বিশেষ ভরসা নেই তাঁর। তাই হয়তো পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ সে ভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি।’ শুভেন্দুর মতো সৌমিত্রও অন্য দল থেকে বিজেপিতে এসেছেন। সৌমিত্র ঘনিষ্ঠদেরও যুক্তি, বিজেপি যেভাবে সদস্য সংগ্রহ করছে, তা বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। তাঁরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মী উঠে আসে, মিসডকল দিয়ে নয়।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠরা যাই বলুন না কেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে বদ্ধপরিকর শুভেন্দু। অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচি বাতিল করে মঙ্গলবার তিনি নিজের জেলায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহ করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ওইদিন কাঁথি–৩ ব্লকের অন্তর্গত কালীনগর বাজার এলাকায় দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে অংশ নিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘একদিনে তমলুক সাংগঠনিক জেলায় ২২ হাজার এবং কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় ১৫ হাজার সদস্য সংগ্রহ হয়েছে।’ সূত্রের খবর, অর্জুন সিং–এর এলাকা ব্যারাকপুরেও সদস্য সংগ্রহ অভিযানে অনেকটা পিছিয়ে বিজেপি। ওই লোকসভা এলাকা থেকে এখনও হাজার তিরিশেক সদস্যও বিজেপি সংগ্রহ করতে পারেনি।