Supreme Court SOP: ভারতের বিচার ব্যবস্থায় গতি আনতে এবং দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি (CJI) এবং অন্যান্য মাননীয় বিচারপতিদের নির্দেশে মামলার শুনানি সংক্রান্ত একগুচ্ছ নতুন নির্দেশিকা বা গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। মূলত আদালতের মূল্যবান সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং জমে থাকা হাজার হাজার মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যেই এই নতুন ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ (SOP) বা কার্যপ্রণালী চালু করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নতুন নিয়মাবলী বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে।
নতুন নির্দেশিকায় আইনজীবীদের জন্য কড়া নিয়ম
আদালতের কার্যক্রমকে আরও মসৃণ ও দক্ষ করে তোলার জন্য জারি করা সার্কুলারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবীদের এখন থেকে শুনানির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময়সচেতন হতে হবে। নতুন নিয়মগুলি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- মৌখিক যুক্তিতর্কের সময়সীমা নির্ধারণ: এবার থেকে আর অনির্দিষ্টকাল ধরে সওয়াল-জবাব চালানো যাবে না। সমস্ত সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডদের (AoR) মামলার শুনানির অন্তত এক দিন আগে জানাতে হবে যে, তাঁরা মৌখিক যুক্তিতর্ক বা ‘ওরাল আর্গুমেন্ট’-এর জন্য ঠিক কতটা সময় নেবেন। এটি সমস্ত ‘পোস্ট নোটিস’ এবং ‘রেগুলার হিয়ারিং’ মামলার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- অনলাইন সাবমিশন: সময়ের এই হিসাব আইনজীবীদের মৌখিকভাবে জানালে হবে না। আদালতের নির্দিষ্ট অনলাইন পোর্টাল অথবা অ্যাপিয়ারেন্স স্লিপের মাধ্যমে এই সময়সীমা বা টাইমলাইন জমা দিতে হবে। এর ফলে ডিজিটাল ব্যবস্থায় তথ্যের স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।
- লিখিত নোট বা সাবমিশন: মামলার মূল বিষয়বস্তু যাতে হারিয়ে না যায়, তার জন্য আর্গুইং কাউন্সিল বা সিনিয়র অ্যাডভোকেটদের একটি সংক্ষিপ্ত লিখিত নোট জমা দিতে হবে। তবে এই নোটটি কোনোভাবেই ৫ পাতার বেশি হওয়া যাবে না। এতে অহেতুক তথ্যের ভিড় কমবে এবং বিচারকরা দ্রুত মূল বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারবেন।
- নোট জমা দেওয়ার সময়সীমা: শুনানির দিনের অন্তত ৩ দিন আগে এই লিখিত নোট আদালতে জমা দিতে হবে। একইসাথে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এর একটি কপি প্রতিপক্ষ বা অপর পক্ষকে (Other Side) প্রদান করতে হবে।
- সময়ের কঠোর পালন: শুধুমাত্র সময়সীমা জানালেই হবে না, আইনজীবীদের সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাঁদের বক্তব্য শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে আদালত অত্যন্ত কঠোর মনোভাব পোষণ করবে বলে জানানো হয়েছে।
বিচার ব্যবস্থায় এর প্রভাব ও তাৎপর্য
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে একটি নজিরবিহীন ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারতে বিচার ব্যবস্থার অন্যতম বড় সমস্যা হলো মামলার পাহাড় জমে থাকা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দিনের পর দিন শুনানি চললেও কোনো রায় বা সিদ্ধান্ত আসে না। নতুন এই নির্দেশিকার ফলে সেই দীর্ঘসূত্রিতা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মৌখিক যুক্তিতর্কের সময় বেঁধে দেওয়া এবং লিখিত নোটের আকার নির্দিষ্ট করে দেওয়ার ফলে আদালতের সময় বাঁচবে এবং একই সময়ে বেশি সংখ্যক মামলার শুনানি সম্ভব হবে। প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগ বিচারপ্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ফলে তাঁরা দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করতে পারেন। বিচার প্রক্রিয়া আরও গতিশীল ও জনমুখী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।














