TET Certificate 2012: অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) ২০১২ সালের প্রাইমারি টেট (TET) উত্তীর্ণদের সার্টিফিকেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই সার্টিফিকেট বিতরণের আগে পর্ষদ আইনি পরামর্শ নেবে বলে জানানো হয়েছে। এই ঘোষণার ফলে সেই সমস্ত কর্মরত শিক্ষকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন, যারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর নিজেদের চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি নির্দেশ অনুযায়ী, সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের অবশ্যই টেট উত্তীর্ণ হতে হবে এবং তার প্রমাণপত্র থাকা আবশ্যক। ২০১২ সালে টেট পাশ করে যারা শিক্ষকতা করছেন, তাদের কাছে কোনো সার্টিফিকেট না থাকায় তারা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই শিক্ষকদের দুশ্চিন্তা দূর করতেই পর্ষদ সার্টিফিকেট দেওয়ার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
২০১২ টেট পরীক্ষার বৈধতা ও বিতর্ক
পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবার প্রাথমিক টেট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালে। সেই পরীক্ষা নিয়ে একাধিক বিতর্কও তৈরি হয়েছিল।
- পরীক্ষার নম্বর: অন্যান্য টেটের মতো ১৫০ নম্বরের পরিবর্তে এই পরীক্ষাটি ১০০ নম্বরে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচটি বিষয়ে ৩০ নম্বরের বদলে ২০ নম্বর করে প্রশ্ন ছিল।
- সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্ন: পরীক্ষায়, বিশেষত গণিত বিভাগে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে প্রশ্ন এসেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলাও দায়ের করা হয়।
- পর্ষদের স্বীকারোক্তি: তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ স্বীকার করে নিয়েছিল যে, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (NCTE) এর নির্দেশিকা সম্পূর্ণভাবে মেনে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়নি।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও রায়
এই মামলা প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলে। অবশেষে ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার রায় দেয়। বিচারপতিরা পর্যবেক্ষণ করেন যে, মামলা চলাকালীন শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আউট-অফ-সিলেবাস প্রশ্নের জন্য সবাইকে পূর্ণ নম্বর দিলে পুরো প্যানেলের ক্রম পরিবর্তন হয়ে যাবে, যা একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে।
সবদিক বিবেচনা করে এবং এটি রাজ্যের প্রথম টেট হওয়ায়, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কিছু ত্রুটি সত্ত্বেও ২০১২ সালের প্রাথমিক টেটকে বৈধতা দেয়। সুতরাং, এই পরীক্ষার বৈধতা নিয়ে বর্তমানে আর কোনো প্রশ্ন থাকার কথা নয়।
পর্ষদের বর্তমান পদক্ষেপ
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল জানিয়েছেন, “শিক্ষকরা বিপদে পড়ুক এমনটা পর্ষদ চায় না। সার্টিফিকেট আমরা দেব ঠিকই, কিন্তু তার আগে ২০১২ সালের নিয়মকানুন কী ছিল, কেন সেই সময় সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি, এই সমস্ত বিষয় আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে খতিয়ে দেখা হবে।”
অর্থাৎ, পর্ষদ সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক হলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সমস্ত আইনি দিক ভালোভাবে যাচাই করে নিতে চায়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, পর্ষদের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হবে কবে, কোথায় এবং কীভাবে এই সার্টিফিকেট বিতরণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের পর্ষদের ওয়েবসাইট বা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ (DPSC) গুলোর সাথে যোগাযোগ রেখে এই বিষয়ে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।














