Upper Primary Recruitment: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্য সরকারের অস্বস্তি ফের বৃদ্ধি পেল। কলকাতা হাইকোর্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রায়ে রাজ্য সরকারের তৈরি করা ১,৬০০টি অতিরিক্ত শূন্যপদ বা ‘সুপার নিউমেরারি পোস্ট’ বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। উচ্চ প্রাথমিকে কর্মশিক্ষা ও শারীর শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই পদগুলি সৃষ্টি করা হয়েছিল, যা নিয়ে দীর্ঘ আইনি জটিলতা তৈরি হয়। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে এই মামলার শুনানি চলাকালীন আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে এই ধরনের পদ তৈরি করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
শূন্যপদের বিস্তারিত পরিসংখ্যান
আদালতের এই রায়ের ফলে সরাসরি প্রভাব পড়েছে উচ্চ প্রাথমিকের দুটি নির্দিষ্ট বিষয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর। রাজ্য সরকার ২০২২ সালে যে অতিরিক্ত পদগুলি তৈরি করেছিল, তার একটি স্বচ্ছ বিভাজন নিচে দেওয়া হলো:
| বিষয় | বাতিল হওয়া শূন্যপদের সংখ্যা |
|---|---|
| কর্মশিক্ষা (Work Education) | ৭৫০টি |
| শারীর শিক্ষা (Physical Education) | ৮৫০টি |
| মোট পদ | ১,৬০০টি |
মৃত প্যানেল এবং আইনি পর্যবেক্ষণ
এই মামলার শুনানিকালে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বেশ কিছু কড়া পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেলের বৈধ মেয়াদ ২০১৯ সালেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার তার তিন বছর পর, অর্থাৎ ২০২২ সালে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে ১৬০০ পদ তৈরি করে। আদালত এই পদক্ষেপকে তীব্র ভর্ৎসনা করে জানিয়েছে যে, একটি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে নিয়োগ করা সংবিধান সম্মত নয়। বিচারপতি বিষয়টিকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এটি যেন একটি মৃত প্যানেলকে ইনজেকশন দিয়ে বাঁচিয়ে তোলার বৃথা চেষ্টা।
প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ
আদালতের রায়ে উঠে এসেছে যে, সরকারের হাতে শূন্যপদ তৈরির প্রশাসনিক বা এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা থাকলেও তা যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা যায় না। ২০২২ সালের মে মাসে রাজ্য মন্ত্রিসভা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল এবং ১৯শে মে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, তা আজ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতির মতে, সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যের অধিকার হরণ করা বা নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের প্রার্থীদের সুবিধা করে দেওয়া আইনের চোখে অপরাধ।
মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়ার যে প্রচেষ্টা করা হয়েছিল, আজ তা প্রতিহত হলো। তিনি দাবি করেন, এই তালিকা বাতিল করে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য এবং বঞ্চিত প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া উচিত। আদালতের এই রায় আগামী দিনে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
Follow Us














