Wbssc Tainted List: পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (WBSSC) ২০১৬ সালের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এক চাঞ্চল্যকর মোড় এসেছে। কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি অমৃতা সিনহা-র কড়া নির্দেশনার পর অবশেষে নড়েচড়ে বসল কমিশন। আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অযোগ্য বা ‘টেন্টেড’ (Tainted) হিসেবে চিহ্নিত প্রার্থীদের একটি বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। দীর্ঘ টালবাহানার পর এই তালিকা প্রকাশ পাওয়ায় আরো দুর্নীতির জট খুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই নতুন পদক্ষেপে মূলত গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি (নন-টিচিং) পদে যে সমস্ত প্রার্থী অবৈধ উপায়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের নাম সর্বসমক্ষে আনা হয়েছে। এর আগে প্রকাশিত তালিকায় স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই বিচারপতি সিনহা কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যার ফলে অবৈধভাবে চাকরিপ্রাপকদের সমস্ত গোপন তথ্য জনসমক্ষে আনতে বাধ্য হলো কমিশন।
তালিকায় প্রকাশিত তথ্যাবলি ও স্বচ্ছতা
কমিশনের দ্বারা প্রকাশিত এই নতুন তালিকাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এতে চাকরিপ্রাপকদের এমন কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া হয়েছে যা তাঁদের শনাক্তকরণে বিশেষ সহায়তা করবে। এর ফলে ভুয়ো বা অবৈধ প্রার্থীদের লুকিয়ে থাকার আর কোনো উপায় রইল না। কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তালিকায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে:
| ক্রমিক নং | বিবরণ |
|---|---|
| ১ | সিরিয়াল নম্বর ও রোল নম্বর (Serial & Roll No) |
| ২ | প্রার্থীর সম্পূর্ণ নাম (Candidate’s Name) |
| ৩ | পদের নাম (গ্রুপ-সি ক্লার্ক, গ্রুপ-ডি পিওন, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট ইত্যাদি) |
| ৪ | পিতা বা মাতার নাম (Parents’ Name) |
| ৫ | জন্মতারিখ (Date of Birth) |
বিশেষ করে পিতা বা মাতার নাম এবং জন্মতারিখ প্রকাশ করার ফলে একই নামের একাধিক ব্যক্তির মধ্যে বিভ্রান্তি দূর হবে এবং নির্দিষ্ট অযোগ্য প্রার্থীকে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।
নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রুপ-ডি পদের আধিক্য
প্রকাশিত তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, গ্রুপ-সি বা করণিক পদের তুলনায় গ্রুপ-ডি বা পিওন পদে অবৈধ নিয়োগের সংখ্যা অনেক বেশি। অর্থাৎ, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নিয়োগেই কারচুপি হয়েছে সর্বাধিক। এই তথ্য সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নিচের তলার পদগুলিতেই অর্থের বিনিময়ে চাকরি বিক্রির প্রবণতা বেশি ছিল?
সংখ্যার গরমিল: কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
আদালতের নির্দেশে কিছুটা স্বচ্ছতা এলেও, পুরো বিষয়টি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে একটি বড়সড় গরমিল:
- আদালতের নির্দেশ: মহামান্য আদালত মোট ৭,২৯৩ জন অযোগ্য (Tainted) প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেছিল।
- প্রকাশিত তালিকা: কিন্তু কমিশন বর্তমানে যে তালিকা বা তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে মাত্র ৩,৫১২ জন অযোগ্য প্রার্থীর নাম ও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই সংখ্যা মোট অযোগ্য প্রার্থীর অর্ধেকও নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বাকি প্রায় অর্ধেক ‘টেন্টেড’ প্রার্থীর তথ্য কেন গোপন রাখা হলো? কমিশন কি ইচ্ছাকৃতভাবে বাকিদের নাম আড়াল করতে চাইছে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো বড় কারণ রয়েছে? এই বিষয়টি নিয়ে চাকরিপ্রার্থী এবং মামলাকারীদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে তথ্য গোপনের চেষ্টার পর অবশেষে আদালতের চাপে এসএসসি এই বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। এর ফলে অবৈধভাবে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের সামাজিকভাবে এবং আইনগতভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তবে আদালতের নির্দেশিত ৭,২৯৩ জনের সম্পূর্ণ তালিকা এখনো প্রকাশ্যে না আসায় কমিশনের সদিচ্ছা ও ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। আগামী দিনে আদালত এই সংখ্যার গরমিল নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য।














